দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক আগাম শীতের সবজি চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গ্রামে এ বছর প্রথমবারের মতো আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ শুরু হয়েছে। মাঠজুড়ে কপির সবুজ সমারোহ এখন কৃষকদের ব্যস্ত রেখেছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২ শতাধিক কৃষককে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই এসব কপি বাজারজাত করা যাবে।
কৃষকের হিসাবে, ৫০ শতক জমিতে চাষ করতে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অথচ ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। তারা জানান, বাজারজাতকরণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে বালাইনাশক স্প্রে বন্ধ রাখা হয়। এতে কপি হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও ভোক্তাবান্ধব।
স্থানীয় কৃষক মো. ফরিদ বলেন, ‘ইউটিউব দেখে নতুন জাতের ফুলকপি চাষের আগ্রহ জন্মে। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ করি। জৈব সার দিয়েই জমি প্রস্তুত করেছি। ৭০-৭৫ দিনের মধ্যেই কপি বাজারজাত করা যায়। গত বছর ভালো দাম পেয়েছিলাম। তাই এ বছর আরও ৮৫ শতক জমি বেশি আবাদ করেছি।’ কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আগে সাধারণ জাতের কপি চাষ করতাম। তবে নতুন জাত দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং আগেভাগেই বাজারজাত করা যায়। তাই লাভও বেশি।’ কৃষক ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আগাম কপি বিক্রির সময় বাজারে দাম দ্বিগুণ থাকে। এতে সংসারের খরচ চালানো ছাড়াও সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটাতে পারছি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, ‘আগাম কপির চাহিদা অনেক। কৃষক বাজারে আনলেই সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। দামও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।’ অন্য ব্যবসায়ী রফিকুল হক বলেন, ‘শীতের পুরো মৌসুমে কপি বিক্রি হলেও আগাম ফুলকপির দাম সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়। কৃষক যেমন লাভবান হন, আমরাও লাভবান হই।’
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দিনাজপুরের বীরগঞ্জকে শস্যভাণ্ডার বলা হয়। এ বছর টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই বাজারজাত হওয়ায় কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন। এগুলো শুধু স্বাদে উন্নত নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রদর্শনী কৃষকরা নিয়মিত পরামর্শ পাচ্ছেন। আগামী বছর আরও কৃষক এ চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি। এতে কৃষকদের আর্থিক উন্নতি ঘটবে। দেশের সবজি চাহিদা মেটাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন মাঠ পরিদর্শন করছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তারা। আমাদের প্রত্যাশা, আগাম ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ সম্প্রসারিত হলে এ অঞ্চলের কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। জাতীয় পর্যায়ে সবজি উৎপাদনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
বীরগঞ্জের প্রাণনগর গ্রামের মাঠে দাঁড়ালেই এখন বোঝা যায় পরিবর্তনের হাওয়া। আগে যেখানে সাধারণ জাতের কপি চাষে কৃষকের লাভ হতো সীমিত, এখন সেখানে আগাম জাতের কপি এনে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। কৃষকের ঘরে এসেছে স্বচ্ছলতা, সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে মিলছে স্বস্তি। ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন। বাজারে ভোক্তারাও পাচ্ছেন স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন সবজি।