X

বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ১০ বিলিয়নের নিচে নেমেছে

বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ গত চার বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৮০ কোটি ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য এ সময়ের মধ্যে খাতটিতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। বিদেশি ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং কমিয়ে দেয়া ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি ঋণে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকার কারণে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার অনেক বেড়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা আগামীতে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। যে কারণে বিদেশি ঋণ সরবরাহকারীদের অনেকে এখন ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে সুদহার ও বিনিময় হারের কারণে গত বছর ব্যবসায়ীদের অনেকে ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাননি। এসব কারণে বিদেশি ঋণ কম এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন বা ৯৮০ কোটি ডলার। গত বছর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ১৩১৯ বিলিয়ন বা এক হাজার ১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার। ২০২৩ সাল শেষে স্বল্পমেয়াদি ঋণের স্থিতি ছিল ১১ দশমিক ৭৯৩ বিলিয়ন বা এক হাজার ১৭৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর ২০২২ সাল শেষে যা ছিল ১৬ দশমিক ৪১৮২ বিলিয়ন বা এক হাজার ৪১ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

এছাড়া ২০২১ সাল শেষে এ খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ছিল ১৫ দশমিক ৪৬৩২ বিলিয়ন বা এক হাজার ৫৪৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
এর আগে ১০ বিলিয়নের নিচে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২০২০ সালে। ওই বছর ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ১৮৯৪ বিলিয়ন বা ৯১৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এর পরের বছরই বিদেশি ঋণে বড় উল্লম্ফন ঘটে। যদিও দুই বছর পর তা আবার নি¤œমুখী হয়। এর আগে ২০১৮ সালে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল সাত দশমিক ২৮২৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৯ সাল শেষে ছিল আট দশমিক ২১০৩ বিলিয়ন ডলার স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো- বৈশ্বিক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের ক্রমাগত দরবৃদ্ধিতে টাকার মান কমে যাওয়া, কড়াকড়িসহ বিভিন্ন কারণে আমদানির পরিমাণ হ্রাস, দেশের ঋণমাণ কমে যাওয়াসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীদের বিদেশি ঋণে অনাগ্রহ।

সাধারণ বিদেশি উৎস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের জন্য তহবিল ঋণ নেয়াকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নেন, যা বায়ার্স ক্রেডিট নামেও পরিচিত। আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোও বিদেশি উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে থাকে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বেনামি-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ কমে এসেছে। এর পাশাপাশি দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ও পর্ষদে পরিবর্তন হয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ ছিল, এসব কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এই ব্যাংকগুলো অবশ্য আমানতকারীদের টাকার চাহিদা মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।

গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্স ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি শেয়ার বিজকে বলেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার ঘনিষ্ঠ অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ বা সীমিত হয়ে গেছে। প্রায় ১২টি ব্যাংক ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখেছে। কেননা তারা আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় সঙ্গত কারণেই বিদেশি ঋণও কমে গেছে। বিনিয়োগের জন্য সাধারণত ঋণপত্র বা এলসি খোলার মাধ্যমে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। সুতরাং আমদানি-রপ্তানিতে একটি সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্যণীয়। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য প্রথমত, ব্যাংক খাত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে হবে। খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচিত সরকার তথা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমেছে। একইভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এটি দেশে নতুন বিনিয়োগ কমার ‘উল্লেখযোগ্য লক্ষণ’ বলেই মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত জানুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট রয়েছে পাঁচ দশমিক ০৮৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিদেশি ঋণের মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট তথা কঠিন শর্তের ঋণ প্রায় ৫২ শতাংশ। এছাড়া ডেফার্ড (বিলম্বিত) পেমেন্ট রয়েছে ৬৪৪ মিলিয়ন ডলার, স্বল্পমেয়াদি ঋণ দুই দশমিক ০৪৯ বিলিয়ন ডলার, বিদেশি ব্যাক টু ব্যাক এলসি এক দশমিক ৩১৩ বিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি দেনা ৭১১ মিলিয়ন ডলার।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings