X

ভারত থেকে ৩৪০ জনকে ‘পুশইন’, ‘পুশব্যাকের’ চিন্তা বাংলাদেশের

কাশ্মীরের পহেলগামকাণ্ডে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চলাকালীন বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে নীরবে ‘পুশইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত দুই সপ্তাহে প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষকে বাংলাদেশের সীমানায় ঠেলে দিয়েছে দেশটি। দিল্লিকে চিঠি দিলেও তাতে উল্লেখযোগ্য সাড়া মেলেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ পাল্টা পুশব্যাকের চিন্তা করছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, সীমান্তে ভারতের পুশইন সুপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনক। যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশইন না করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এছাড়া পুশইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত ভারত থেকে পুশইনের মাধ্যমে আসা ২৬২ জনকে বিজিবি আটক করেছে। এদের মধ্যে ২২৩ জন বাংলাদেশি, ১৯ জন রোহিঙ্গা এবং বাকি ২০ জনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আর সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে কোস্ট গার্ড আটক করেছে ৭৮ জনকে। সাতক্ষীরায় ৭৮ জনের মধ্যে তিনজন জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক। মোট আটকের সংখ্যা ৩৪০ জন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি গভীর উদ্বেগের বিষয়। এটি চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পুশইনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো যেতে পারে, যা হচ্ছে তা আইনসম্মত নয়। এভাবে চলতে থাকলে ভারত পুশইনের সুযোগ নিয়ে কোনো বড় অপরাধীকেও পাঠাতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশও ভারতে পুশব্যাক করার চিন্তা করছে। বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় নাগরিক আছেন, যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাদের বিষয়ে নজরদারি চলছে।

এর আগে গত ৯ মে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৮ জনকে ফেলে যায় বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও তিনজন ভারতীয় নাগরিক। উদ্ধারদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তাদের গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, অনেকে অসুস্থ এবং কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে।

এর আগে গত ৭ মে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পুশইন করানোর পর ১২৩ জনকে আটক করে বিজিবি। তাদের মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, শান্তিপুর ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরাও জানান, তাদের গুজরাট থেকে উড়োজাহাজে করে প্রথমে ত্রিপুরায় নিয়ে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। তারপর এক ঘণ্টা হাঁটিয়ে সীমান্ত দিয়ে এ পারে ঠেলে দেওয়া হয়। এদের ভেতর বাংলা ভাষাভাষী ছাড়াও রোহিঙ্গা ও গুজরাটি ভাষায় কথা বলা মানুষও ছিল বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।

পুশইন বন্ধে দিল্লিকে চিঠি ঢাকার
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পুশইনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কাছে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। অনতিবিলম্বে পুশইন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে ৯ মে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়।

সীমান্ত দিয়ে মানুষ প্রবেশ করানো গ্রহণযোগ্য নয়
আলোচিত এ ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৭ মে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিটি কেস আলাদা আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করবো। তবে এটা ফরমাল চ্যানেলে হতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।

পরদিন ৮ মে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ভারতকে অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক চিঠিতে। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের পুশইন গ্রহণযোগ্য নয়।

যা বলছেন বিশ্লেষকরা
পুশইন নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক আলতাফ পারভেজ এবং অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর।

‘এভাবে পুশইন আন্তর্জাতিক নিয়মে নেই’
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘পুশইন প্রচলিত নিয়মের বাইরে করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ আইনসম্মত নয়। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন কিংবা তাদের (ভারতের) সঙ্গে আলাপ করা উচিত। সেখানে যদি আমাদের কোনো নাগরিক থাকে তাহলে আলাপ-আলোচনা করে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এভাবে পুশইন আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। কারণ কাদের পুশইন করছে সেটাও আমরা জানি না।’

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যদি কাউকে পুশইন করা হয় সেখানে কাদের পাঠানো হচ্ছে সে বিষয়ে তো আমাদের জ্ঞান নেই। এজন্য এটা গ্রহণযোগ্য নয়, তাদের (ভারতের) সঙ্গে কথা বলা দরকার এবং প্রতিবাদ করা উচিত।’

মিডিয়া অ্যাটেনশনের জন্য পুশইন হতে পারে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ডিপ্লোম্যাটিক নিয়মের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হওয়া জরুরি এবং এটি স্বাভাবিক। পুশইনের পরেও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে বোঝানো, বলা, রিচ করা- কিন্তু এগুলো না করার কারণ কী। উনি (হাইকমিশনার) না আসারও কারণ নেই। উনি (হাইকমিশনার) আসতে বাধ্য, এটি প্রোটোকল।’

Categories: জাতীয়
firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings