X

ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গবেষকরা দূরবর্তী ‘কে২-১৮বি’ গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ শনাক্ত করেছেন, যা পৃথিবীতে মূলত জীব থেকে উৎপন্ন হয়। গ্রহটি তার নক্ষত্রের বাসযোগ্য এলাকায় প্রদক্ষিণ করছে।

গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে সম্ভাব্য জৈব গ্যাস ডাইমিথাইল সালফাইড (ডিএমএস) ও ডাইমিথাইল ডিসালফাইড (ডিএমডিএস) শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো পৃথিবীতে সাধারণত সামুদ্রিক শৈবাল ও অন্যান্য জীব থেকে উৎপন্ন হয়। এ আবিষ্কার প্রাণ খোঁজার বৈজ্ঞানিক চেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও গবেষকরা এখনই নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নারাজ।

তারা বলছেন, এ ধরনের অজানা রাসায়নিক উপস্থিতির পেছনে প্রাণ ছাড়া অন্য কোনো প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে কি না, তা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। অন্য যন্ত্র ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যে একই ফল পাওয়ায় এ বিষয়ে উৎসাহ বাড়লেও এটি এখনো প্রমাণিত ‘জীবনের অস্তিত্ব’ নয়। এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ওপর ভিত্তি করে এটা স্পষ্ট যে, অন্য কোথাও প্রাণের আবিষ্কারের জন্য একটি একক শনাক্তকরণের চেয়ে অনেক কিছুর প্রয়োজন হবে। দূরবর্তী মহাবিশ্বকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে হলে বিজ্ঞানীদের শুধু বায়ুমণ্ডলীয় প্রমাণ ছাড়াও একটি গ্রহের পৃষ্ঠ, অভ্যন্তর এবং বৃহত্তর পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। ওয়েব টেলিস্কোপের অতুলনীয় ক্ষমতার সঙ্গে কেবল বায়ুমণ্ডলীয় ইঙ্গিতই নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি বিস্তৃত নতুন যুগের ভিত্তি স্থাপন করছে।

প্রাণের ইঙ্গিত মিললেও নিশ্চিত প্রমাণ এখনো বাকি
নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নতুন করে প্রাণ অনুসন্ধানের যুগ শুরু করেছে। শক্তিশালী ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ও উচ্চ রেজল্যুশনের সাহায্যে এটি সৌরজগতের বাইরে ছোট ও পাথুরে গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারছে। তবে শুধু কয়েকটি গ্যাস শনাক্ত করা যথেষ্ট নয়, একটি গ্রহের পৃষ্ঠ, অভ্যন্তরীণ গঠন ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বুঝতে না পারলে প্রাণ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
একেকটি গ্রহ পর্যবেক্ষণে ওয়েব টেলিস্কোপের শত শত ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তবুও ফলাফল স্পষ্ট নাও হতে পারে। একটি নক্ষত্রের বার্ধক্য এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন অনুসন্ধানে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ওয়েব যে গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারে, এর মধ্যে কিছু আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক কম উজ্জ্বল নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে।

ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান নিশ্চিতকরণ দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধান করা সহজ কাজ নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যেখানে সম্ভাব্য প্রাণের চিহ্ন (বায়োসিগনেচার) শনাক্ত করলে তা জীবনের প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না। এ ধরনের একটি ইঙ্গিত পাওয়ার পর প্রয়োজন হয় বিস্তৃত অনুসন্ধান, একাধিক উৎস থেকে তথ্য যাচাই এবং জটিল বায়ুমণ্ডলীয় মডেলিং।

কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলে যদি সম্ভাব্য বায়োসিগনেচার গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে বিজ্ঞানীরা জীববৈজ্ঞানিক এবং অজৈবিক উভয় সম্ভাবনার জন্য পৃথক মডেল তৈরি করেন। এরপর তৈরি হয় অনুমান ও পূর্বাভাস, যা আবার নতুন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। এমনকি কোনো পর্যবেক্ষণে যদি প্রাণের অস্তিত্ব বাতিলও হয়ে যায়, তবুও এই নেতিবাচক ফলগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ভবিষ্যতের অনুসন্ধান আরও নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ একটি অপ্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করছে। যদিও এটি মূলত প্রাণ অনুসন্ধানের জন্য ডিজাইন করা হয়নি, তবুও এর পারফরম্যান্স এটিকে প্রথম পর্যবেক্ষণযন্ত্র হিসেবে স্থান দিয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা তারকার চারপাশে ঘূর্ণায়মান ক্ষুদ্র গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করতে পারে।

ওয়েব টেলিস্কোপ এখন এমন এক নতুন গ্রহশ্রেণি নিয়ে কাজ করছে, যাদের বলা হয় ‘হাইসিয়ান’ গ্রহ। এটি সম্ভাব্য বাসযোগ্য বিশ্বের একটি তাত্ত্বিক শ্রেণি, যা পৃথিবীর চেয়ে বড়, তুলনামূলকভাবে পাতলা হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং যথেষ্ট তরল জলের মহাসাগর ধারণ করে। এর মধ্যে ‘কে২-১৮বি’ নামের গ্রহটি নিয়ে গবেষণা চলছে, যেটি হাইসিয়ান গ্রহ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ওয়েব টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের ‘হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি’ নামের মিশনের ভিত্তি তৈরি করছে, যা সূর্যের মতো নক্ষত্রের চারপাশে পৃথিবীর মতো গ্রহে প্রাণ অনুসন্ধানে কাজ করবে। জেমস ওয়েবের আবিষ্কার সৌরজগতের বাইরের মহাকাশ সম্পর্কে জানার পথকেও প্রসারিত করছে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings