X

ভুল ওষুধ খেয়ে ফেললে যা করতে হবে

ভুল ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় অসাবধানতাবশত, ওষুধের প্যাকেটের গুলিয়ে ফেলা, ডাক্তার না দেখিয়ে নিজে ওষুধ সেবন করা বা ফার্মাসিস্টের ভুলের কারণে মানুষ ভুল ওষুধ খেয়ে ফেলে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নেই, ভুল ওষুধ খেলে কী করতে হবে—

১. শান্ত থাকুন এবং আতঙ্কিত হবেন না
প্রথমেই মনে রাখা দরকার, ভুল ওষুধ খেলেই সবসময় মারাত্মক কিছু হবে—এমন নয়। অনেক সময় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীর তা সহ্য করতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা জরুরি। তবে গাফিলতি না করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

২. ওষুধটির নাম, মাত্রা ও খাওয়ার সময় মনে রাখুন
যদি সম্ভব হয়, ভুলে খাওয়া ওষুধের প্যাকেট, প্রেসক্রিপশন বা বোতলটি সংরক্ষণ করুন। কখন, কতটা পরিমাণে ও কী ধরনের ওষুধ খেয়েছেন, তা নির্ধারণ চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

৩. তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
ভুল ওষুধ খাওয়ার পর প্রথম কাজ হচ্ছে নিকটস্থ চিকিৎসক, হাসপাতাল বা বিষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Poison Control Center) এর সঙ্গে যোগাযোগ করা। প্রয়োজনে ৯৯৯-এ ফোন করে এম্বুলেন্স ডাকুন। চিকিৎসককে ওষুধটির নাম, ডোজ এবং খাওয়ার সময় জানাতে হবে।

 

৪. উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করুন
ভুল ওষুধ খাওয়ার পর নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:

 

• বমি বা বমির ভাব।
• মাথা ঘোরা।
• অতিরিক্ত ঘুমঘুম ভাব।
• হৃদস্পন্দনের তারতম্য।
• শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা।
• চামড়ায় ফুসকুড়ি বা চুলকানি।
• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ভুল ওষুধ অনেক সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়।

 

৫. ওষুধ বমি করিয়ে ফেলা – চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করবেন না
অনেকের ধারণা ভুল ওষুধ খাওয়ার পর নিজে থেকেই বমি করিয়ে ফেললে ক্ষতি কমে যাবে। কিন্তু এটা সবসময় ঠিক না। কিছু ওষুধ এমন ধরনের হয়, যা পেটে থাকলে ক্ষতি কম করে, কিন্তু বমি করালে খাদ্যনালীতে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া নিজে কিছু করার চেষ্টা করবেন না।

৬. একটিও ওষুধ বাদ দিবেন না – সব তথ্য দিন
যদি একাধিক ওষুধ একসাথে খেয়ে ফেলেন বা অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে ভুল ওষুধ খেয়ে ফেলেন, তাহলে সবগুলো ওষুধের নাম চিকিৎসককে জানান। কখনো কখনো একাধিক ওষুধ মিলে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া (drug interaction) করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

৭. হাসপাতালে গেলে কী হয়?
চিকিৎসকেরা প্রথমেই রোগীর জ্ঞানের অবস্থা, শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তচাপ, হার্টবিট ইত্যাদি পরীক্ষা করেন। প্রয়োজন হলে পেট পরিষ্কার করার জন্য “গ্যাস্ট্রিক ল্যাভাজ” করা হতে পারে। পাশাপাশি রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায় ওষুধ শরীরে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে। কিছু বিশেষ ওষুধের বিষক্রিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টিডোট ব্যবহার করা হয়।

৮. শিশু বা গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে আলাদা সতর্কতা
শিশুদের শরীরে ওষুধের প্রভাব অনেক বেশি হয়, তাই সামান্য ভুলও তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। একইভাবে গর্ভবতী নারীরা ভুল ওষুধ খেলে সেটা গর্ভের শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে।

ভুল ওষুধ খাওয়ার ঝুঁকি কমাতে নিচের কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার—
• সবসময় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
• ওষুধের প্যাকেটে লেবেল দেখে নিশ্চিত হয়ে খান।
• একই রকম দেখতে ওষুধ আলাদা কৌটায় বা জায়গায় রাখুন।
• চোখে স্পষ্ট না দেখা গেলে পরিবারের কাউকে দেখিয়ে ওষুধ খান।
• বাচ্চাদের নাগালের বাইরে ওষুধ রাখুন।
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য কারো ওষুধ নিজের জন্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

১০. মানসিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা
সবার উচিত ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে নিজে সচেতন হওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন করা। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা মানসিক রোগের ওষুধ রয়েছে—তারা বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

সবশেষ 
ভুল ওষুধ খাওয়ার ঘটনা ভয়াবহ হলেও দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, ওষুধের তথ্য প্রদান এবং নিজে কিছু না করার সংযম দেখানো—এই তিনটি বিষয়ই জীবন রক্ষাকারী হতে পারে। একইসাথে ভবিষ্যতের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি, যেন এমন ভুল আর না ঘটে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings