X

ভূমিহীনেরা জমির মালিক হচ্ছেন, আর মালিকেরা হয়ে যাচ্ছেন ভূমিহীন

দেশে কৃষিজমির মালিকানার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। যাঁরা একসময় জমির মালিক ছিলেন, তাঁরা ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছেন; আর যাঁরা ভূমিহীন ছিলেন, তাঁরা জমির মালিক হচ্ছেন। বিষয়টি হলো জমির মালিকেরা এখন আর চাষাবাদ করেন না। তাঁরা জমি বর্গা বা ইজারা দেন। কিন্তু প্রতিবছর বর্গা দেওয়া ঝামেলাপূর্ণ। এ ছাড়া বর্গাদারের কাছে বেশি দিন জমি থাকলে তা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে জমির মালিকেরা এখন জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্গাদারেরা তা কিনে নিচ্ছেন।

কৃষির বিকাশ নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ফেলো ও চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) বিনায়ক সেন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

শাইখ সিরাজ দেশের কৃষি খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। স্বাধীনতার পর দেশে কৃষি খাতের যে বিকাশ হয়েছে, তিনি তার প্রত্যক্ষদর্শী। সে অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, দেশের কৃষকদের অবস্থার বড় পরিবর্তন হয়েছে। একসময় কৃষকদের বাড়িতে গেলে মুড়ি ও গুড় খেতে দেওয়া হতো। কৃষক কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতেন। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এখন কৃষকের বাড়িতে সোফা ও টেলিভিশন এসেছে। তাঁরা টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজেন। এই যে তাঁরা জমির মালিক হচ্ছেন, সেটা তাঁদের অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষণ।

শাইখ সিরাজ আরও বলেন, একসময় কৃষিশ্রমিকদের খাবার ছিল গামলাভর্তি ভাত ও মরিচ ভর্তাসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা। এখন কৃষিশ্রমিকেরা যদি শোনেন মরিচভর্তা দিয়ে তাঁদের খাওয়ানো হবে, তাঁরা সেই বাড়ির আশপাশেই যাবেন না। অর্থাৎ কৃষিশ্রমিকের খাবারে পরিবর্তন এসেছে; ভাতের পরিমাণ কমেছে; যোগ হয়েছে শাকসবজি ও মাছ।

পরিবর্তনের আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় বর্ণনা করেন শাইখ সিরাজ। তিনি বলেন, গ্রামের বাজারে দেখা যায়, কৃষকেরা সারা দিন চায়ের দোকানে ভিড় করেন। জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, তাঁরা দিনে গড়ে ৩ থেকে ১০ কাপ পর্যন্ত চা পান করেন। এতে দেশের চায়ের বাজার বড় হয়েছে। কৃষকেরা যে এভাবে চা পান করছেন, সেটাও তাঁদের অবস্থা পরিবর্তনের পরিচায়ক।

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের গবেষক ও দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্ন ও আলোচনা করেন। তাতে কৃষির পরিবর্তনশীল জগতের চিত্র উঠে আসে। তাঁরা বলেন, দেশের কৃষি খাতের বাণিজ্যিকীকরণ ঘটছে। বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, কৃষি খাতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে, তা দৃশ্যমান। কৃষকের খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আসছে; তাঁদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে শহরের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও দেশে কৃষির পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন। সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করাই অর্থনীতির কাজ; সে জন্য কৃষি খাতে বড় খামার গড়ে উঠছে। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ঘটছে। অর্থাৎ কৃষিতে একধরনের কাঠামোগত রূপান্তর ঘটছে।

শামসুল আলম আরও বলেন, কৃষক ধানের দাম না পেলে অর্থকড়ি ফসল উৎপাদনে ঝুঁকবে, এটাই স্বাভাবিক। শহরের মানুষ নিজের জমির ব্যবহার নানাভাবে করতে পারেন। কৃষক ধান উৎপাদন না করে অন্য কিছু উৎপাদন করতে চাইলে খাদ্যনিরাপত্তার কথা বলে তাঁদের আটকানো যাবে না।

অনুষ্ঠানে খাদ্যের বৈচিত্র্য ও গুণগত মান নিয়ে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর জবাবে শাইখ সিরাজ বলেন, অর্গানিক বা জৈব কৃষিরও চাহিদা তৈরি হচ্ছে। শহরের মানুষের চাহিদা তৈরি হচ্ছে বলেই এখন ডেউয়া ও গাবের মতো ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তেমনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় তরুণেরা জৈব কৃষিতে উদ্যোগী হচ্ছেন। তাঁদের সহায়তা করা গেলে জৈব কৃষিরও বিকাশ ঘটবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings