মো. আলিম উল্লাহ খান বয়োবৃদ্ধ। থাকেন ঢাকায়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই আসেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। ফেনী জেলা সদরের মৌটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়িতে আসার পর তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ২২ আগস্ট ভোরে তিনি মারা যান। উনার সঙ্গে থাকা পানিবন্দি লোকজন অনেক চেষ্টা করেও তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে পারেননি। দাফনের ব্যবস্থা করতে দুই দিন অপেক্ষা করেন তারা। এক পর্যায়ে লাশে পচন ধরার ভয় থেকে তাকে ভেলায় করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়! আলিম উল্লাহর এক ছেলে ও এক মেয়ের কেউ তখন তার সঙ্গে ছিলেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার এক ছেলে মো. মাসুদ খান প্রিন্স লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ আমার বাবা যেন একটু মাটি পায়। আল্লাহ তুমি সব কিছুর মালিক, তুমি এই দুর্দিনে আশ্রয় দাও। অন্তত তার কবর যেন জিয়ারত করতে পারি ওই সুযোগ করে দাও।’
আলিম উল্লাহ খানের প্রতিবেশী ও আত্মীয় ওমানপ্রবাসী মো. ফারুক জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে তাদের বাড়িরসহ আশপাশের কয়েকটি পরিবার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়।মো. আলিম উল্লাহ খান বয়োবৃদ্ধ। থাকেন ঢাকায়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই আসেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। ফেনী জেলা সদরের মৌটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়িতে আসার পর তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বন্যা নিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ফেনীর মো. রাসেলের। খাবারের সন্ধানে এক ভাইয়ের বাড়িতে আসতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা সাঁতরে পার হয়েছেন। বাকি পাঁচ কিলোমিটারের পথের বেশির ভাগ এসেছেন নৌকায় করে। তা-ও বেশ অনুরোধ করে নৌকায় উঠতে হয়। কিছু পথ পানি মাড়িয়ে হেঁটে আসেন তিনি।
সাত কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে উনার সময় লাগে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময়। নিজ গ্রাম মৌটুবি ইউনিয়নের বাঘাইয়া থেকে ফেনী পৌর এলাকার এসএসকে রোডে ভাইয়ের বাড়িতে এসে দেখেন পুরো শরীর সাদা হয়ে গেছে। বড় ভাইয়ের বাসায় এসব বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মো. রাসেল জানান, তার বৃদ্ধ মাসহ সাত সদস্যের পরিবারের সবাই এখনো বাড়ির ছাদে অবস্থান করছেন। শুরুর দিকে দুই দিন না খেয়ে থাকার পর তারা বৃষ্টি পানিতে ক্ষুধা মিটিয়েছেন। এরপর কেউ একদিন এসে মুড়ি দিয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।
বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারা যায় ‘ফেনী ফুডিস’ নামে একটি ফেসবুক পেজে। পেজটি ঘেঁটে দেখা যায় শত শত আকুতি। পানিতে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের আকুতি বেশি। এ ছাড়া অনেকে সহায়তার করার ইচ্ছা পোষণ করেও পোস্ট দিচ্ছে। লেখা হচ্ছে নানা নির্দেশনার কথা।
ফেনী-সোনাগাজী রোডের আমির উদ্দিন মুন্সীর হাটের নাজমুন তৃষা নামে পেজটিতে একজন লেখেন, ‘এই গ্রুপে লস্করহাটের কেউ আছেন? আমার বোন, তার দুই ছেলে মেয়ের খোঁজ পাচ্ছি না চার দিন ধরে।’
ইনুর নাহার রাফি নামের একজন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘তার মা-বাবার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না চার দিন ধরে।’
মো. রাশেদ নামেরে একজন সকালে লেখেন, ‘ফুলগাজী উপেজলার পুরাতন মুন্সীর হাটের উত্তর শ্রীপুর সৌদিয়া হোটেলের পাটোয়ারি টাওয়ারে ২৫০+ মানুষ অবস্থান করছে। তিন দিন ধরে তারা বন্যার পানি খাচ্ছে।’
ফাহমিদা রিশাদ লেখেন, ‘আজিম ধুল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ খাবার সংকটে আছে। আমার চাচা-চাচিও আছেন। চার দিন পর তাদের খোঁজ পেলাম। খাবার দিয়ে সহায়তা করুন।’
আদনান হাসান নামের একজন লেখেন, ‘পশ্চিম সোনাপুরে কেউ ত্রাণ নিয়ে কেউ যেতে রলেন, ওখানে অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।’
এদিকে বাবার লাশ কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাসুদ খান। তিনি লেখেন, ‘যারা উপস্থিত ছিলেন তারা কিভাবে পারলেন এটা। আরেকটা দিন অপেক্ষা করতেন। পরস্থিতি অনুযায়ী অন্তত তিন দিন রাখা যেত। কেউ যদি এগিয়ে আসত তাহলে আমার বাবাকে ফ্রিজিং করে রাখা যেত।’
এ পোস্টের কমেন্টসে অনেকে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে বৃদ্ধের লাশ পেলে যেন কবর দেওয়া হয় সেই কথা লিখে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে দেন। যদিও দুই দিন চেষ্টা করেও এসব ফোন নম্বরে কল যায়নি।