সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিতরণ করা ব্যাংকঋণ এখন বিপুল হারে খেলাপি হয়ে পড়ছে। ক্ষমতাচ্যুত দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যবসায়ীর ঋণ অনিয়মজনিত কারণে খেলাপি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও নতুন নীতিমালার কারণেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ভালো-খারাপ প্রায় সব ব্যাংকেই এই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। এর আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং হার ছিল ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব ঋণ নামে–বেনামে বিতরণ করা হয়েছিল, এখন তা খেলাপি হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে ঋণ শ্রেণিকরণের নিয়ম কঠোর করায় অনেক ঋণ নবায়নযোগ্য না হয়ে খেলাপি হয়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই ঋণ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্যে, তৎকালীন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট প্রভাবশালী গোষ্ঠী নানা অনিয়মে ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিয়ে গেছে, যার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে।
সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ চট্টগ্রামের আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের চিত্র এখন উন্মোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত বেড়েছে। এসব ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া সরকারি খাতের অগ্রণী ও জনতা এবং বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, ইউসিবি, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়ালসহ অধিকাংশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে।
এদিকে খেলাপি হয়ে পড়া ১ হাজার ২০০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় ঋণ নবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সুবিধা পেয়েছে। ব্যাংকগুলো পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ নীতি-সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।