X

ময়মনসিংহের জেসমিন আরা এখন অনেকের আইডল

জেসমিন আরার শখ গাছ লাগানো। এই ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে বাবাকে দেখে। জেসমিন যখন খুব ছোট; তখন থেকেই বাবাকে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগাতে দেখতেন। বাবা গড়ে তুলেছিলেন আম বাগান। নিজেও একদিন মস্ত বড় বাগান গড়বেন, সেই স্বপ্ন ছিল জেসমিনের। নিজের শ্রম আর চেষ্টায় সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। গড়ে তুলেছেন দেশের সবচেয়ে বড় নার্সারি। সফল এ নারী উদ্যোক্তা এখন অনেকের আইডল।

ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকায় ‘আধুনিক নার্সারি অ্যান্ড হর্টিকালচার ফার্ম’ নামের নার্সারির অবস্থান। ১২ একর জায়গাজুড়ে জেসমিনের নার্সারিতে বনজ চারা ছাড়াও আছে দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙা, মিষ্টি তেঁতুল, চালতা, লিচু, বেল, লটকনসহ বিভিন্ন জাতের অসংখ্য চারা। বর্তমানে ৩০০ প্রজাতির উন্নতমানের ৪ লক্ষাধিক চারা আছে। যা বিক্রি করা হচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৯ সালে নার্সারিটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে নিয়মিত ২১ জনসহ ৩৫ জন শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা গাছ পরিচর্যাসহ চারা উত্তোলন করে বিক্রি করেন। শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা দেন জেসমিন।

কথা হয় নার্সারিতে কাজ করা মনির, নাজমা, আজিজসহ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে টাকা রোজগার করতেন। জেসমিন আরা নার্সারি গড়ে তোলার সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন। প্রতিদিন তারা ৫০০ টাকা মজুরি পান। বাড়ির পাশে কাজ পেয়ে এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছে।

কথা হয় আধুনিক নার্সারি ও হর্টিকালচার ফার্মের পরিচালক ও সফল নারী উদ্যোক্তা জেসমিন আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবা গাছকে যত্ন করতেন পরম মমতায়। গাছের প্রতি বাবার ভালোবাসা দেখে একদিন বাগান করার স্বপ্ন দেখতাম। বিয়ের পর স্বামীকে স্বপ্নের কথা জানাই। স্বামীও সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। তার পরামর্শে ৫ বছর আগে নার্সারি করি। ধীরে ধীরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকায় লাভবান হই।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন উন্নত জাতের চারা বিক্রি করি। এগুলোয় ফলন বেশি হয়। স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে চারা কিনে নেন। নার্সারি করছেন এমন অনেকেই পরামর্শ নিতে আসেন। বেকার যুবকরাও উন্নত জাতের চারা নিয়ে নার্সারি গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।’

জেসমিন আরও বলেন, ‘দেশে সবচেয়ে বড় নার্সারি গড়ে তোলায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে সনদপত্র, ক্রেস্ট ও নগদ টাকা পেয়েছি। এতে আরও উৎসাহ পেয়েছি। গৃহিণীর পরিচয়ের পাশাপাশি সারাদিন নার্সারিতে সময় দিয়ে আরও সফল হওয়ার চেষ্টা করছি।’

জেসমিন আরার স্বামী ড. শামছুল আলম মিঠু ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে সব সময় উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছি। জেসমিন আরা সংসার সামলানোর পাশাপাশি নার্সারিতে অনেক সময় দিয়েছেন। কখনো হেঁটে আবার কখনো ভ্যানগাড়ি কিংবা রিকশায় চড়ে নার্সারিতে যান। তার শক্ত মনোবল আর ইচ্ছাশক্তির কারণে নার্সারিটি এখনো টিকে আছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘সারাদেশে প্রচুর গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে, গড়ে তুলতে হবে নার্সারি। কারণ গাছের তৈরি অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে আছি। জেসমিন আরার মতো অনেকে সফল উদ্যোক্তা হবেন—এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings