X

মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ক্ষতির মুখে কৃষি

বাংলাদেশে চলতি বছর এপ্রিল মাসে তাপমাত্রার ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কৃষি, মত্স্য, প্রাণিসম্পদ, স্বাস্থ্যসহ সব সেক্টরেই ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমে বোরো ধানের আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।

আমের মুকুল ঝরে গেছে। দুধ, ডিম ও মাংসের উত্পাদনে ২৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। চরম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘটনা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সহসাই এ থেকে পরিত্রাণের সুযোগ নেই।

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এমন বক্তব্য দেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের উদ্দেশ্য ছিল তাপপ্রবাহের বিজ্ঞান-নীতি-অনুশীলন সমন্বয় সম্পর্কে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে অবগত ও সচেতন করা। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ বলেন, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানগুলোর ওপর জোর দিয়ে অবকাঠামো এবং নকশা প্রণয়নের জন্য প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের বর্তমান অবকাঠামোগুলোকে নতুন করে সাজাতে হবে এবং তাপ উত্পাদন কমাতে নতুন প্রযুক্তি আনতে হবে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, যে কোনো দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি বিপদাপন্ন হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এটি কোভিডের সময় দেখেছি, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় দেখেছি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও দেখছি।

যাদের কথা বলার সুযোগ নেই, যাদের কথা শোনার কেউ নেই, তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। দুর্ভাগ্যবশত, এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এমন কিছুর জন্য ক্ষতির শিকার হচ্ছে, যার জন্য তারা মোটেও দায়ী নয়।

তাপপ্রবাহের কারণ ও পূর্বাভাস নিয়ে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক এল ফাতিহ এ বি এল তাহির ও গবেষক ইয়েওন উ চোই।

তারা বলেন, এপ্রিল-মে হচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের সময়, যখন পানির ঘাটতি দেখা দেয় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এমন চরম তাপমাত্রাই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা যায়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মোকাবিলায় এখন থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন বলেন, বর্তমানের এই ঢাকা শহর গড়ে তোলার সময় চরম তাপপ্রবাহের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়নি। সীমিত সম্পদ হাতে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের সকলকে সমন্বিতভাবে গৃহীত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশে এ বছরের তাপপ্রবাহের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, প্রচণ্ড তাপে বোরো ধানের আবাদ ৬ থেকে ১৬ শতাংশ কমে যেতে পারে। আমের মুকুল ঝরে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহে পোলট্রি খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকার। দুধ, ডিম ও মাংসের উত্পাদনে ২৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।

তীব্র তাপের কারণে ঢাকা বছরে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শ্রম উত্পাদনশীলতা হারাচ্ছে। এর ফলে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার মোট উত্পাদনশীলতার ৫ শতাংশ হারাতে পারে, যা প্রায় ৪০ লাখ পূর্ণকালীন চাকরির সমান এবং এর ফলে প্রায় ৪.৯ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি হারাতে হতে পারে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings