X

মাধুর্যে ঘেরা হালদায় যা আছে দেখার

চট্টগ্রামের হালদা নদীর সৌন্দর্য দেখে যে কেউই মুগ্ধ হবেন। দক্ষিণ এশিয়ায় মিঠাপানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনস্থলও এটি। শুধু তাই নয়, হালদা নদীর গতিময়তা, পানির অবারিত ছুটে চলা, শ্রুতিমধুর স্রোত, গাঙ্গেয় ডলফিনের ঝাঁক, বিভিন্ন পাখি ও জলজ প্রাণী হালদার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। তবে কালের আবহমানে নেতিবাচক নানাবিধ কারণে হারাতে বসেছে হালদা নদীর চিরচেনা রূপ ও জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা গিয়েছিলাম হালদায়। মূলত আমাদের একাডেমিক এনভায়রনমেন্টাল রিপোর্টিং কোর্সের ফিল্ড ওয়ার্ক অংশ হিসেবেই হালদা ভ্রমণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার সুযোগ হয়েছে।

হালদা রক্ষায় জেলে, স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতনতার পাশাপাশি হালদা পাড়ের জেলেদের জীবন, নানা সংগ্রাম, এখানকার জীববৈচিত্র্য, প্রাণ-প্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইত্যাদি জানা ও দেখাই ছিল আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা হালদার পাড়ে পৌঁছে দুটি নৌকা ভাড়া করে ২টি গ্রুপ নেমে পড়ি হালদার পানিতে। হালদার বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। মূলত এসব ডিঙি নৌকা করে মানুষ যেমন হালদার সৌন্দর্য উপভোগ করে তেমনই প্রজনন মৌসুমে জেলেরা ডিম সংগ্রহ করে।

আমাদের ছোট ২টি ডিঙি নৌকা চলছে হালদার জলাধারের সঙ্গে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে ডিগবাজি দিয়ে সবাইকে চমকে দিচ্ছে দু-একটি গাঙ্গেয় ডলফিন। নৌকার বৈঠা চালাতে চালাতে মাঝি-মাল্লাদের বিভিন্ন লোকজ গান, প্রাকৃতিক পরিবেশ, হিমেল হাওয়া আর পানির কলতান অন্যরকম অনূভুতি দেবে আপনাকে।

হালদা নদীকে স্থানীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হয়। মাছ ধরার পাশাপাশি মাছের ডিম সংগ্রহ এবং পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। হালদা বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে রুইজাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়।

 

তবে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, অবৈধভাবে মাছ শিকার, শিল্প-কারখানার বর্জ্য, অবৈধ বালু উত্তোলন, নদীর বাঁক কাটাসহ নানা কারণে হালদা নদীর পানিতে কমেছে মাছের সংখ্যা। একই সঙ্গে চরম হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার জীববৈচিত্র্য।

হালদা রক্ষায় নেই তেমন কোনো পদক্ষেপ। তবে তরুণ প্রজন্ম যদি হালদার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে না জানে কিংবা সচেতন না হয়, সেক্ষেত্রে অচিরেই হারিয়ে যাবে চট্টগ্রামের সুখ হালদা।

আমরা ১০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে যাই। আমাদের প্রতিটি প্ল্যাকার্ডে ছিল সচেতনতামূলক বার্তা। আমরা স্থানীয় জেলে, আশপাশের জনসাধারণকে, হালদা কেন গুরুত্বপূর্ণ ও হালদা রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি।

হালদাপাড়ের লোকজন ও জেলেদের চোখে-মুখেও আছে নানা সংগ্রামের গল্প। হালদা নদীর উপর ভর করেই অসংখ্য মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার জেলেরা জানান, হালদা নদীর প্রজনন সময় হচ্ছে এপ্রিল-জুন এই তিন মাস। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে তিথি বলা হয়।

স্থানীয় জেলেরা ডিম ছাড়ার তিথির পূর্বেই নদীতে অবস্থান নেন ও ডিম সংগ্রহ করেন। ডিম সংগ্রহ করে তারা সারাদেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে বিক্রি করেন। হালদা শুধু একটি নদী নয়, এটি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 

হালদা কেবল চট্টগ্রামের জলধারা নয়, এর সঙ্গে জুড়ে আছে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অর্থনীতি। হালদার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গান, সিনেমা, লোকশিল্প। কোনো কারণে যদি হালদা নদী বিপন্ন হয়, তাহলে চট্টগ্রমের মানুষের জীবনযাত্রাও বিপন্ন হবে। তাই হালদাকে বাঁচাতে সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থী: পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,চট্টগ্রাম।

Categories: পর্যটন
Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings