X

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী অসিত বসু

নড়াইলের শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের যুবক অসিত বসু প্রথমবারের মতো মাশরুম চাষ করে নজর কেড়েছেন সবার। নিজ উদ্যোগে চাষ শুরু করে এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার খামারে এখন চাষ হচ্ছে তিন প্রজাতির মাশরুম। যেটা বিক্রি হচ্ছে অনলাইন ও অফলাইনে। অসিতের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার এলাকায় আরও অন্তত ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হন। শুরুটা হয়েছিল একেবারেই ছোট পরিসরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ঘরের এক কোণে ৫০টি স্পন দিয়ে তিনি এই চাষ শুরু করেন। এখন তার খামারে স্পনের সংখ্যা ২ হাজার। খড়কুটা, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, ক্যালসিয়াম চুন ও পানি মিশিয়ে তিনি তৈরি করেন চাষের উপযোগী বেড। জীবাণুমুক্ত করে ২৮ দিন ল্যাবে রেখে তৈরি করেন মাদার টিস্যু। এরপর নির্ধারিত তাপমাত্রা ও আলো-আঁধারির পরিবেশে পলিথিন মোড়ানো প্যাকেটে চাষ করেন মাশরুম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধাপাকা টিনশেড ঘরের ভেতরে ঝুলন্ত প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এসেছে সাদা রঙের মাশরুম। পরিচর্যায় তখন ব্যস্ত সময় পার করছিলেন অসিত।

অসিত বসু বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ঢাকায় ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিই। পরে অফিস থেকে চাষের উপকরণ, এমনকি মাশরুম দিয়ে চপ তৈরি করে তা বাজারে বিক্রির জন্য ভ্যান গাড়িও দেওয়া হয়।’ তিনি জানান, গতবার তারুণ্যের মেলায় মাশরুম চপ বিক্রি করে তিনি আয় করেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে মাসিক আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

স্থানীয় যুবকরাও এই খামারকে দেখছেন শিক্ষার জায়গা হিসেবে। আলোকদিয়ার যুবক আরাফাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন তার খামারে গিয়ে কাজ করি। শিখেছি অনেক কিছু। অল্প সময়ের মধ্যেই আমিও চাষ শুরু করব।’

 

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জমান বলেন, ‘মাশরুম চাষ সম্পর্কে যে মৌলিক ধারণা অসিত পেয়েছেন, সেটিকে কাজে লাগিয়ে চাষ শুরু করেছেন। তার সঙ্গে আরও ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যুক্ত হচ্ছেন। একসঙ্গে কাজ করলে এলাকাটি মাশরুম পল্লি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এখন আগ্রহ নিয়ে মাশরুম কিনছে। অসিত নিজেই তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। অনলাইনেও চাহিদা বাড়ছে। আমি মনে করি, তার দেখাদেখি আরও শিক্ষিত বেকার যুবক এই চাষে এগিয়ে এলে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

নারীদের কর্মসংস্থানে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর, সেটিও তুলে ধরেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। নড়াইলে ইতোমধ্যে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু বাজার তৈরি হয়েছে, দ্রুতই মাশরুম চাষ সম্প্রসারিত হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই চাষের মাধ্যমে ঘরে বসেই আয় করতে পারবে। তাদের একত্রিত করে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনাও প্রবল।’

অসিত বসুর সাহসী উদ্যোগ এখন শুধু তার নিজের সাফল্যের গল্প নয়, বরং তার এলাকার জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দিক। এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হলে নড়াইল হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings