মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুরের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম তার ছোট মেয়ে লামিয়ার শখ পূরণ করতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। বাজারে সহজলভ্য না হওয়ায় নিজের উদ্যোগেই তিনি এই চাষে নামেন। তার শখের এই উদ্যোগই পরবর্তীতে তাকে সফল কৃষি উদ্যোক্তায় পরিণত করে।
স্ট্রবেরি চাষের শুরু ও সম্প্রসারণ:
মঞ্জুরুল ইসলাম প্রথমে বাড়ির ছাদের ১০টি টবে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। সফলতা পেয়ে তিনি রাজশাহী টিস্যুকালচার থেকে উন্নতমানের চারা সংগ্রহ করে দেড় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ৪ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করছেন। তার খামারে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসেন, কেউ শেখার জন্য, কেউবা স্ট্রবেরির সৌন্দর্য ও স্বাদ উপভোগ করতে।
উৎপাদন ও লাভজনকতা:
প্রতি গাছে ৮০০-৯০০ গ্রাম স্ট্রবেরি উৎপাদন হয়।
স্ট্রবেরির পাইকারি বাজারমূল্য ৪০০-৫০০ টাকা প্রতি কেজি।
প্রতিদিন দেড় থেকে ২ মণ ফল সংগ্রহ হয়।
খরচ বাদ দিয়ে ১৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন।
আগামীতে আরও কয়েক লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে।
বাজারজাতকরণ ও কৃষকদের আগ্রহ:
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা মঞ্জুরুল ইসলামের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, কারণ বিদেশি দামের তুলনায় তার উৎপাদিত স্ট্রবেরি হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে।
চাষের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
স্ট্রবেরি চাষে মানসম্মত টিস্যু চারার সংকট রয়েছে। মঞ্জুরুল ইসলাম মনে করেন, সরকারি সহযোগিতায় উন্নত টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপন করা গেলে সারাদেশের উদ্যোক্তারা উন্নত চারা পেতে পারবেন। তিনি আগামীতে আরও জমিতে চাষ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন।
কৃষি বিভাগের মতামত:
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, “মঞ্জুরুল ইসলামের সাফল্য দেখে অনেক কৃষক স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি উচ্চমূল্যের একটি ফসল, এবং কৃষি বিভাগ আগ্রহী চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছে।”
মঞ্জুরুল ইসলামের এই সফলতা প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম করলে কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। স্ট্রবেরি চাষ মেহেরপুর অঞ্চলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে।