X

মেহেরপুরে বেহাল মৎস্য বীজ খামার, রেণু সংকট

মেহেরপুরে মাছ চাষ দিন দিন বাড়ছে। তবে উৎপাদন প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের বেহাল দশা। স্থানীয় চাহিদার তুলনায় রেণু ও পোনা উৎপাদন একেবারেই নগণ্য। ফলে বাইরের জেলা থেকে পোনা এনে খরচ বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। সদর উপজেলার মাছচাষি ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘১০ বছর মাছ চাষ করছি, মনে হয় যেন মেহেরপুরে কোনো মৎস্যবীজ খামারই নেই। বাইরের জেলা থেকে রেণু ও পোনা কিনতে হয়। এতে খরচ বেশি, পোনাও অনেক সময় নষ্ট হয়।’

জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে গিয়ে দেখা গেছে, খামারটি অনেকটাই জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। রেণু সংগ্রহ কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। পোনার পুকুরগুলোর পাড় বড় বড় ঘাসে ঢেকে গেছে। অফিস চলছে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে।

জানা গেছে, জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি দীর্ঘদিন কার্যত বন্ধ। ছয়টি পুকুর থাকলেও এখান থেকে জেলাব্যাপী পোনার চাহিদার সিকিভাগও মেটানো যাচ্ছে না। মৎস্যচাষি হীরক আহমেদ বলেন, ‘খামারটি অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অযত্নে পড়ে আছে পোনার পুকুরগুলো। অল্প কিছু পোনা উৎপাদন হলেও তা সরকারি অবমুক্তকরণ কর্মসূচিতে চলে যায়। মাছচাষিরা সেখান থেকে কোনো উপকার পান না।’

চাষিদের রেণু ও পোনা যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এতে একদিকে পরিবহন ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে মানসম্মত পোনা পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। মেহেরপুরের চাষিরা পাঙাশ, নাইলোটিকা, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষ করেন। এসব মাছ জেলার বাইরে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাতেও বিক্রি হয়। অথচ এখানকার বাজারে অধিকাংশ মাছ আসে অন্য জেলা থেকে।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মোহিত বলেন, ‘পোনার জন্য বাইরে যেতে হয় বলে চাষিদের যাতায়াত খরচ বেড়ে যায়। এতে উৎপাদন খরচও বাড়ে। মানসম্মত হ্যাচারি না থাকায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’ আরেক ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, ‘জেলায় খামার থাকলেও সরকারি সহযোগিতার অভাবে হ্যাচারি গড়ে ওঠেনি। হ্যাচারি করতে আগ্রহীরা সরকারি সহায়তা পেলে ভালো হতো।’

জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে গিয়ে দেখা গেছে, খামারটি অনেকটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। রেণু সংগ্রহ কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। পোনার পুকুরগুলোর পাড় বড় বড় ঘাসে ঢেকে গেছে। অফিস চলছে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি একাই সব কাজ করি- খাদ্য দেওয়া, পরিচর্যা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। অনেক সময় মাছ টিকে না। পানির গুণগত মান খারাপ বলেই এমনটা হয়।’

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বছরে ১২ হাজার ৯৬৯ টন পোনার চাহিদা রয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে খামার থেকে উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৭৫৯ কেজি পোনা। রেণু সংগ্রহ করা হয়েছে ১১০ কেজি।

মৎস্যবীজ খামারের ব্যবস্থাপক শরিফ ইকবাল বলেন, ‘পুকুরগুলোর নিচে বালুমাটি থাকায় পানি থাকে না। কয়েক বছর আগে কিছু পুকুরে পলিথিন দেওয়ায় কিছুটা পানি ধরে রাখা যায়। তবে স্বাভাবিকভাবে খাদ্য উৎপাদন হয় না। জনবলও মাত্র চারজন, এত কম জনবল দিয়ে কিছুই করা যায় না।’ তিনি আরও জানান, রেণু উৎপাদনে আয়রনযুক্ত পানিও বড় বাধা। এ জন্য পানি শোধনাগার স্থাপন ও আইওটি বেসড পুকুর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে খামারটি চাষি-বান্ধব করা সম্ভব। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাধন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘হ্যাচারি তৈরি করতে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। মাঠপর্যায়ের সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখে সমাধান নেওয়ার উদ্যোগ চলছে।’

জেলায় ৪ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জলায়তনে মাছ চাষ করেন ৬ হাজার ৯০৯ জন। আর নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২ হাজার ২৩০ জন। স্থানীয় খামারের সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে, তাদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবেন।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings