X

যশোরে চাঙা রেণু-পোনার মোকাম

যশোরের শহরতলি চাঁচড়া এলাকায় মৌসুমের শুরুতে তীব্র তাপপ্রবাহে কিছুটা ব্যাহত হলেও এখন জমে উঠেছে রেণু ও চারা মাছের বেচাকেনা। বর্ষার আগমনে জমে উঠেছে এখানকার বাবলাতলার মোকাম। প্রতিদিন এখানে দেড় কোটি টাকার বেশি রেণু ও পোনা মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ মাছের পোনা সরবরাহ হয় যশোর থেকেই।প্রতিদিন ভোরে শুরু হয় হাট। ভোলা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাক, পিকআপ, বাসের ছাদ ও ট্রেনযোগে এসব পোনা পৌঁছে যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, টেংরা, পাবদা, গোলসাসহ নানা প্রজাতির মাছের রেণু ও পোনা।চাষি শাহাজাহান হোসেন বলেন, ‘দাবদাহের শুরুতে সমস্যা হয়েছিল। প্রচণ্ড গরমে পুকুরের পানি গরম হয়ে ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে পরিবেশ অনুকূলে আসায় রেণু উৎপাদন স্বাভাবিক হয়।’ আরেক চাষি আবির হাসান শিহাবও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।

 

রেণু পোনা ব্যবসায়ী জি এম আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘এই মোকামে ৫০০-৬০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ মণ পোনা বিক্রি হয়। আর টাকার অঙ্কে তা দেড় থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। হাট ঘিরে জীবিকা নির্বাহ হয় প্রায় দুই হাজার মানুষের।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাজারে রুই রেণু প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা, মৃগেল ২২০-২৮০, কাতলা ২৫০-৩০০, সিলভার কার্প ১৫০-১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শিং মাছ প্রতি হাজার পিস ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, টেংরা ৪০০-৬০০, পাবদা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৩৬টি হ্যাচারিতে রেণু ও পোনা মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে কার্পজাতীয় রেণু-পোনা উৎপাদন হয় প্রায় ৬৫ টন। জেলার চাহিদা ১৫ টনের একটু বেশি, ফলে উদ্বৃত্ত ৫০ টন মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।

 

এ ছাড়া তেলাপিয়া, পাঙাশ, শিং, মাগুর , পাবদা, গুলসা, বিগহেড, থাই সরপুটি, কৈ, থাই কৈ, রুই, কাতলা, মৃগেল- সব ধরনের রেণু পোনা উৎপাদিত হয় এই অঞ্চলে। হ্যাচারির পাশাপাশি যশোরে পাঁচ-ছয় হাজার নার্সারি রয়েছে। এখানকার দুই লাখ মানুষ মাছ উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট পেশায় যুক্ত।

হ্যাচারি মালিক সমিতির নেতা ফিরোজ খান বলেন, ‘আশির দশকে চাঁচড়ায় রেণু উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটে। বর্তমানে অর্ধশতাধিক হ্যাচারিতে সাদা মাছের রেণু উৎপাদিত হচ্ছে, যা দেশের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটায়। বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পোনা বিক্রি হয় এখান থেকে।’

 

সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা বলেন, ‘চাঁচড়ার মাছের পোনার গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। চলতি বছরে ৬৫ মেট্রিক টন রেণু পোনা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদনে সহায়তা করছে মৎস্য বিভাগ।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘যশোরে কার্পজাতীয় মাছ চাষ বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। স্বাদু পানির মাছের মধ্যে শিং, কৈ ও মাগুরের উৎপাদন বাড়ছে। দেশি কৈয়ের পাশাপাশি থাই ও ভিয়েতনামের কৈও চাষ হচ্ছে। এখানকার রেণু পোনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings