যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্টার সেন্টারে’র একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৯ মে) সকাল ১০টায় গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুপক্ষের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
কার্টার সেন্টারের ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জোনাথন স্টোনস্ট্রিট ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর তারা শরিফ, মাইকেল বালদাসারো, সাইরাহ জাহেদি, ড্যানিয়েল রিচার্ডস ও কাজী শহীদুল ইসলাম।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং দলের চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আর অন্যটি গণতন্ত্রায়ণ। তিনি বলেন, নির্দিষ্টভাবে তারা (কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দল) যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছেন, সেটা হচ্ছে, নির্বাচনে তারা হয়ত মনিটরিং করতে আসতে পারেন। যদি সেটা হয়, সেটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে এবং সেটা কখন, মূলত এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ড. মঈন খান বলেন, দেখুন আমি কারো সমালোচনা করতে চাই না। একটা ছোট উদাহরণ দিচ্ছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি হয়েছে, আমি তাদেরকেও বলেছি, আমরা এরশাদের পতনের সময় দেখেছিলাম একটি কেয়ারটেকার সরকার এবং সেটাও কিন্তু একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারটাও কিন্তু ৯০ দিনের মাথায় বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল এবং আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ কিন্তু সমালোচনা করে না।
তিনি আরো বলেন, কাজেই এটা বুঝতে হবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে গেলে যে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি নিতে হবে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। এরই মধ্যে নয় মাস হয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো মানুষের আলোচনায় আসবে। আমরা যদি নাও করি, মানুষ চুপ করে থাকবে না। আলোচনা হয়েছে কত দ্রুত এটা করা যায় এবং বিএনপি কখন এ নির্বাচনটি প্রত্যাশা করছে।
নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি’র স্পষ্ট বক্তব্য এরই মধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আপনারা জানেন, আমরা বলেছি, এই বছরের শেষ নাগাদ যদি নির্বাচন হয় তাহলে এটা জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা বিশ্বাস করি অহেতুক যদি বিলম্ব হয়, যে সমস্যাটি আপনারা দেখতে পারছেন, আজকে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি সেটা কিন্তু আজ থেকে ৯ মাস আগে ৫ আগস্টের যে পরিস্থিতি ছিল তার থেকে ভালো নয়।
তিনি আরো বলেন, কাজেই যদি দেশের স্থিতিশীলতা কোনো কারণে বিঘ্নিত হয়, তাহলে কিন্তু এটা ১৮ কোটি মানুষের জন্য সুখকর হবে না। সেজন্য একটি কথা আমরা জোর দিয়ে বলেছি, জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি। সেই সত্যিকার প্রতিনিধি যেটা নির্ধারিত হতে পারে একমাত্র একটা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে, সেই নির্বাচন যত শিগগিরই হয়, আমরা বিশ্বাস করি সেটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সে কথাটি আমরা তাদের বলেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৮২ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকারকে এগিয়ে এবং মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করে।
প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় করছে। তারই অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে এই বৈঠক হল।
খবর: বাসস