X

রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভ্রমণ ও রোজা পালন

রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সফর ও রোজা পালন

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা দেশ-বিদেশে ভ্রমণের তাগিদ দিয়েছেন এবং ভ্রমণকে ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। একটি আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, “বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, তোমাদের আগের লোকদের কী পরিণাম হয়েছিল!” (সুরা রুম, আয়াত : ৪২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে সফর করতেন এবং রোজা পালন অথবা ভঙ্গ করার বিষয়ে তিনি বিশেষ নমনীয় ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে রোজা অবস্থায় সফরে বের হন এবং ‘উসফান’ নামক এলাকায় পৌঁছালে পানপাত্র আনার নির্দেশ দেন। পরে তিনি প্রকাশ্যে পানি পান করে লোকদের দেখানোর জন্য মক্কা পর্যন্ত পানাহার অব্যাহত রাখেন। এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, সফরের সময় রোজা পালন করা, অথবা প্রয়োজনে ভঙ্গ করা, উভয়ই অনুমোদিত ছিল। (বুখারি : হাদিস নং- ১৯৪৮)

একটি আরেকটি হাদিসে আনাস (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে আমরা সফরে ছিলাম। সে সময় রোজা রাখার চেয়ে পানি পানকারী ব্যক্তিরা বেশি কাজ করছিলেন এবং তাদের জন্য বেশি সওয়াব ছিল।” (বুখারি, হাদিস নং- ২৭৩৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দেন যে, সফরে রোজা পালন করা কঠিন হয়ে পড়লে, পানাহারকারী ব্যক্তিরা সওয়াব নিয়ে যায়, কারণ সফর সাধারণত খুবই কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এছাড়া, আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে রমজানে সফরে বের হওয়ার সময় প্রচণ্ড তাপ ছিল, এবং আমাদের মধ্যে মাত্র দুটি ব্যক্তি—রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) রোজা রেখেছিলেন।” (মুসলিম : হাদিস নং- ১১২২)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, সফর চলাকালীন রোজা পালন একটি কঠিন কাজ হতে পারে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী রোজা ভঙ্গ করার অনুমতি ছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠিন অবস্থায় রোজা রাখার বিষয়ে বলেছিলেন, “এরা পাপী, এরা পাপী,” এবং সফরে রোজা রাখার কাজকে কোনো পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেননি। (মুসলিম : হাদিস নং- ১১১৪)। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সফররত অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করাকে অনুমোদন দিয়েছেন, এবং সেই সময় আল্লাহর প্রদত্ত রুখসত গ্রহণ করার গুরুত্ব দিয়েছেন।

কোরআনে সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫-এ আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে (ভ্রমণে) থাকবে, তাহলে সে অন্য সময় সেই (রোজা) সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং কঠিন চান না।” এই আয়াতের মাধ্যমে সফরকারী বা মুসাফিরের জন্য রোজা ভাঙা বা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে রোজা না রাখলে, পরবর্তীতে তাকে কাজা আদায় করতে হবে।

এভাবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে সফর করার সময় রোজা রাখার এবং ভঙ্গ করার নিয়ম সম্পর্কে একটি নমনীয় ও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যা মুসলিমদের জন্য দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে।

Categories: ধর্ম
Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings