X

‘রাষ্ট্র’, ‘অচিরজীবীর প্রার্থনা’ নিয়ে আলোচনায়, কে এই ইলা লালালালা?

ঢাকার ব্যান্ডে নারী ভোকালিস্টের সংখ্যা হাতে গোনা। চিরকুটের সুমি, লালন ব্যান্ডের সুমি আর হাতে গোনা অল্প কয়েকজন নারী ভোকালিস্ট। তরুণদের মধ্যে আলাদা করে নজর কেড়েছেন যশোরের মেয়ে ইলা।

বিপ্লব, প্রেম কিংবা বিষাদ—ইলার গানে সবই আছে। ‘রাষ্ট্র’ গানে প্রতিবাদ, ‘অচিরজীবীর প্রার্থনা’ গানে বিষাদ আর ‘সঙ্গতি’তে এক অভিশপ্ত সম্পর্ক, ‘প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক–ই,/ কিন্তু শান্তি পাবে না।’

মাত্র এক বছরের পথচলায় পাঁচটি গান করেছে ইলার ব্যান্ড ডিমোক্রেজি ক্লাউনস্। প্রতিটি গানই শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে। অথচ কোনো গানেরই রেকর্ড তারা ছাড়েনি; কনসার্ট থেকে রেকর্ড হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গানগুলো পরিচিতি পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইলা।

যশোরে ইলার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। যশোরেই দেড় বছরের মতো সেমিক্ল্যাসিক্যাল শিখেছিলেন। ছয় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বিএএফ শাহীন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। শৈশব থেকেই বিভিন্ন মাজারে লালনের গান করেছেন। মোটামুটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গান করেছেন। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর পারিবারিকভাবে গান গাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হারমোনিয়ামটাও বিক্রি করে দেওয়া হয়। মাঝখানে পাঁচ বছরের মতো গান বন্ধ ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর গানে ফেরেন ইলা। রাজনীতি করতে গিয়ে তাহমীদ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়। পরে আরও কয়েকজন মিলে গত বছর ডিমোক্রেজি ক্লাউনস্ শুরু করেন।

টিএসসিতে প্রথম শোতে বাস্কিং (গান গেয়ে অর্থ তোলা) করেছিলেন ইলা, তাহমীদরা। মূলত বাস্কিং থেকেই ব্যান্ডটা দাঁড়িয়ে গেল। এক বছরের পথচলায় প্রথম গান ‘আহুতি’, এরপর ‘সঙ্গতি’, ‘নির্বিকার’, ‘রাষ্ট্র’ ও ‘অচিরজীবীর প্রার্থনা’। এর মধ্যে চারটি গানেরই সুর বেঁধেছেন ইলা; গেয়েছেনও তিনি।

গণ–অভ্যুত্থানের পর ‘জরুরি সংযোগ’ কনসার্টের আয়োজন করেছিল ব্যান্ডটি; সঙ্গে গানও করেছিল। নভেম্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘আওয়াজ উডা’ শীর্ষক আয়োজনে গাইতে দেখা গেছে তাঁকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শো করেছেন ইলারা। ঢাকার বাইরে প্রথমবার হবিগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমিতে শো করতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

ঢাকার বাইরের শ্রোতারা কীভাবে নেবেন, এটা নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন ইলা। তবে তাঁর গান শুনে শ্রোতাদের আবেগ তাঁকে ছুঁয়ে গেছে। ইলা বললেন, ‘মধ্যবয়সী নারীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, তোমার গলা সুন্দর। ঢাকার ইন্টেলেকচুয়ালরা আমার গান শোনে, আবার প্রান্তিক এলাকার মানুষও শোনে। আমি আমার গানে শোষক শ্রেণি বাদে সবাইকে সংযুক্ত করতে চাই। পৃথিবীটাকেই আমার গান শোনাতে পারব।’

কী ধরনের গান করছেন, তার একটা ধারণাও দিয়ে রাখলেন ‘জেন–জি’ গায়িকা ইলা। তিনি বলেন, ‘গানে আমি শুধু আকাশ, বাতাস, ফুল–পাখি বোঝাতে চাই না। সময়টাকে বোঝাতে চাই। হয় তুমি শোষিত, নয় শোষক। জায়গাটা দেখাতে চাই। পপুলারিটির দিকে গেলে আমাকে বেঁধে দেওয়া হবে। ফলে ওই দিকে যাইনি।’

নিজের বিচিত্র নামের গল্পটাও শোনালেন এই তরুণ সংগীতশিল্পী, তাঁর নাম মূলত ইলা। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে ইলার পরে লালালালা যোগ করেছিলেন। অনেকটা সুরের মতো শোনায়; এরপর থেকে সংগীতাঙ্গনে ইলা লালালালা নামেই পরিচিতি পান।

এ বছরের জুলাইয়ে ডিমোক্রেজি ক্লাউনসে্র প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তবে আন্দোলনের মধ্যে সেটি হয়নি। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি অ্যালবামের ঘোষণা দেবেন। শুরুতে স্পটিফাইয়ে অডিও গান প্রকাশ করবেন, পরে ভিডিও চিত্র প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings