X

শতকোটি টাকার বেশি চিনি বিক্রির আশা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বিস্তৃত জমিতে আখের খেত দোল খাচ্ছে বাতাসে। কৃষকরা ধাপে ধাপে আখ কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর আখ থেকে পাতা ছেঁটে, যন্ত্রচালিত কলের মাধ্যমে রস বের করা হচ্ছে। ওই রস জ্বাল দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি হয় অদানা বাদামি রঙের লাল চিনি। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই নির্ভেজাল চিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। অনেকে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছেন। এ বছর ১০০ কোটি টাকার বেশি চিনি বিক্রির আশা করা হচ্ছে।ঐতিহ্যবাহী এই লাল চিনি সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকরা আখ চাষ ও লাল চিনি তৈরির কাজে যুক্ত। প্রতি বছর এই উপজেলায় শতকোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয়। এ বছরও স্থানীয় কৃষকরা ১০০ কোটি টাকার বেশি বিক্রির আশা করছেন।

 

তবে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পরও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আখ শোধনাগার বন্ধ থাকা, উন্নত জাতের আখের অভাব, ন্যায্য দাম না পাওয়া এবং প্রণোদনা না থাকা এসবই সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সমাধান ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রণ ও চাহিদা বৃদ্ধি করা কঠিন।আখচাষিরা জানান, জমি থেকে আখ সংগ্রহের পর তা পরিষ্কার করে যন্ত্রচালিত কলের মাধ্যমে রস বের করা হয়। এরপর জ্বালঘরের চুলায় সাতটি লোহার কড়াই বসিয়ে প্রথমে কাঁচা রস ঘন করা হয়। পরে কাঠের মুগুর দিয়ে বারবার নাড়া হয়, তৈরি হয় অদানা বাদামি লাল চিনি। ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় অন্তত ২৫০ বছর ধরে কৃষকরা প্রাকৃতিক উপায়ে লাল চিনি উৎপাদন করছেন। এই চিনি স্থানীয় মানুষের কাছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ।উপজেলার পলাশতলী গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদাকে আখ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখেছি। একপর্যায়ে আমি নিজেও আখ চাষ শুরু করি। কয়েক বছর ভালো দাম না পেয়ে অনেকেই আখ চাষ থেকে সরে গেছেন। তবে এ বছর ভালো দাম পাচ্ছি।’

 

একই গ্রামের মুসলেম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ৮৫ শতাংশ জমিতে আখ আবাদ করেছি। চিনি ৭ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করতে পেরেছি। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুশি। সরকারি উদ্যোগে উন্নত আখের জাত পেলে উৎপাদন আরও বাড়বে।’কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বংশপরম্পরায় লাল চিনি উৎপাদন টিকে আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। এখান থেকে তৈরি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার মণ লাল চিনি, যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। এ বছর আখ রোপণ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। এতে আশা করা হচ্ছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হবে। কৃষি অফিস মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কৃষকদের সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে চাষ বৃদ্ধি করতে কাজ করছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাল চিনিতে আখের সব উপাদান রয়েছে। এতে আছে শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, উপকারী অ্যামাইনো অ্যাসিড, জিংক, ফলিক অ্যাসিডসহ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানা উপাদান। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে লাল চিনি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘লাল চিনি আন্তর্জাতিক বাজারে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। এটি কমার্শিয়াল কৃষির বাস্তব রূপ দেখাবে। বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে চাষিরা লাভবান হবেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, ‘কৃষকরা আরও আগ্রহের সঙ্গে আখ চাষ করছেন। আগামী বছর আখ উৎপাদন আরও বাড়াতে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে। উন্নত জাত ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই, ফুলবাড়ীয়ার বিখ্যাত লাল চিনি দেশের সীমা পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছাক। এতে চাষিরা ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবেন নির্ভেজাল চিনি।’

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings