X

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা হয়ে

গোপালগঞ্জ জেলার কলিগ্রামের ডেভিড রত্নের ছোট ছেলে মানিক রত্ন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় বাঁশ পণ্য নিয়ে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মানিক।উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১০ বছর গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যের অধীনে কাজ করে অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়েও যখন কর্মদাতাকে খুশি করা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি না করে তার বাবার কাজটিকে নিজের জীবিকা করবেন। ভেবেই ক্ষান্ত হননি, মাত্র এক হাজার টাকা নিয়েই তিনি উদ্যোগ শুরু করে দিলেন।প্রথমে কাজের অবসরে একটু একটু করে বাঁশের কাজের চর্চা করেন। চাকরির অবসরে হস্তশিল্পের কাজের তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাঁশের কাজে নিয়োজিত হোন।এতে করে তার পারিবারিক অবস্হার অবনতি হয়। ফলে তার সহধর্মিনী পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন এবং তিনিই পারিবারের সম্পূর্ণ ভার বহন করতে শুরু করেন। সেই সাথে স্বামীকে হস্তশিল্পের কাজেও সাহায্য করছিলেন। কিন্তু টানা তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করায় অসুস্হ হয়ে পড়েন এবং পোশাক কারখানার চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। এতে করে মানিকের পারিবারিক অবস্হার আরো অবনতি হয়। তবুও শত কষ্টের মধ্যেও মানিক তার শিল্পকে ধরে রাখেন।পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার একটি মেয়ে আছে৷ নাম মোহনা। টেলিভিশন এবং ইউটিউব চ্যানেলে বাঁশের তৈরি নানান ধরনের জিনিস দেখে বেশ উৎসাহিত করে বাবাকে, সাহায্যও করে। তাই মেয়ের নামেই মানিক তার উদ্যোগের নাম দেন ‘মোহনা হ্যান্ডিক্রাফট’।

 

ছোট একটি কারখানা আছে তার। বিশেষ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাড়ির আঙিনায় কাজ করেন সাতজন কারিগর। তাদের মধ্যে চারজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী।মানিকের মোহনা হ্যান্ডিক্র্যাফটসে রয়েছে বাঁশ ও পাটের টুল, চুলের খোপা ক্লিপ, টেবিল ল্যাম্প সেড, পাটের রিডিং ল্যাম্প সেড, কাঁটা চামচ (ব্যবহারযোগ্য), কলমদানি, চামচদানি, অ্যাসট্রে, এ্যাকুরিয়াম, টি টেবিল, পানি পানের গ্লাস, ওয়্যাল ম্যাট। এছাড়াও বাঁশের সোফা, খাট, চেয়ার, খাবার টেবিল, দোলনা ইত্যাদিও তৈরি করা হয়।

পণ্যের গুণাবলী সম্পর্কে মানিক রত্ন বলেন,
• বাঁশ একটি প্রাকৃতিক এবং টেকসই উপাদান
• অতি সহজলভ্য উপাদান
• ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করলে এটি ১০০ বছরও টেকসই হতে পারে।

আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত একজন প্রতিবেশীর মাধ্যমে তিনি সেখানে একটি হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে সুযোগ পান এবং বেশ কিছু পণ্য বিক্রি করতে পারেন। পরবর্তীতে আরো কিছু পণ্যের অর্ডার আসে। এতে করে তার আত্ববিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায়।এছাড়া এলাকায় অনেকে দেখতে এসে কিছু কিছু পণ্য কিনে নিয়ে যান। ঢাকার নিউমার্কেটে হস্তশিল্প দোকানে মাঝে মধ্যে কিছু পণ্য বিক্রি হয়। বিদেশে রপ্তানি করার ইচ্ছা থাকলেও এখনো কোনো মাধ্যম তিনি পাননি।আনুমানিক মাসে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে তার।মানিক রত্ন বলেন, ‘নিয়মিত সবাই সঠিকভাবে শ্রম দিলে প্রতি মাসে তিন থেকে চার লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু সঠিক বাজারজাত না থাকায় আমরা বেশি পণ্য উৎপাদন করছি না।’তিনি বলেন, ‘জীবনে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বেঁচে থাকতে চাই। যারা সমাজে ও পরিবারে বোঝা হয়ে বেঁচে আছে, আমার ইচ্ছা এরা একদিন পরিবারের বোঝা নয়, হবে অবলম্বন। আমরা কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই না। আমাদের উদ্ভাবনের জন্য সমাজের সকল শ্রেণির লোকের ভালোবাসা ও উৎসাহ চাই। সঠিক ক্রেতা পেলে আমাদেরও দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠবে আনন্দময় এবং মনে আসবে প্রশান্তি। তখন আমরা গর্ব করে বলতে পারবো, আমরা প্রতিবন্ধী আমরা কারো বোঝা বা সমাজের অভিশাপ নই, আর্শীবাদও হতে পারি।’

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings