X

শিষ্টাচার লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা: প্রধান বিচারপতি

শিষ্টের লালন ও অন্যায়ের দমন হলো বিচার বিভাগের শাশ্বত দায়িত্ব। বিচারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যে কেউ অন্যায় কিংবা শিষ্ঠাচার লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যে কেউ ভালো কাজ করলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু কোনো প্রকারের বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

সোমবার (১২ আগস্ট) আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এসব কথা বলেন।

সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য দেন।

এ মুহূর্তে আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি
প্রধান বিচারপতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও এর ফলে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের কারণ বিষয়ে আপনারা সবাই অবগত আছেন। এ মুহূর্তে আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। বিগত বছরগুলোতে বিচার প্রক্রিয়ায়, আমাদের বিচারবোধ, ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। সততার বদলে শত্রুতা, অধিকারের বদলে বঞ্চনা, বিচারের বদলে নিপীড়ন, আশ্রয়ের বদলে নির্যাতনকে স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এ রকম সমাজ ও রাষ্ট্র আমরা চাইনি। এ ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই আমাদের নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।

‘আমি ওপরে যে মূল্যবোধের বিনাশ, বিকৃতি ও দূষণের কথা উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাদের আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। আজ থেকে প্রতিটি শ্রেয়, শুভ ও কল্যাণকর কর্মে সবাই বিচার বিভাগকে আপনাদের পাশে পাবেন। ’

কোনো প্রকারের বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি সচেতন আছি যে, আমাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ছাড়াও সারা দেশব্যাপী অবস্থিত ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারি হলো বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত ক্ষেত্র। সাবঅর্ডিনেট জুডিসিয়ারিতে কর্মরত আমার বিচারক সহকর্মীরা আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশের সাধারণ মানুষ বিচার বিভাগ বলতে মূলত ডিস্ট্রিক্ট জুডিসিয়ারিকে বোঝেন। ফলে জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত আমার সহকর্মীদের বলছি, আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনারা কোনো ধরনের অন্যায় চাপ ও ভয়-ভীতির আশঙ্কা করবেন না। নির্ভয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারিক কাজ পরিচালনা করুন। আমরা সবাই অবগত আছি যে, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নের ভগ্নদশা থেকে বিচার বিভাগও মুক্ত নয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার বিজয়ের এ ঐতিহাসিক মুহূর্ত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। আমরা যেন এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারি সেদিকে আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।

শিষ্টের লালন ও অন্যায়ের দমন হলো বিচার বিভাগের শাশ্বত দায়িত্ব। বিচারক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যে কেউ অন্যায় কিংবা শিষ্ঠাচার লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে কেউ ভালো কাজ করলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু কোনো প্রকারের বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

শহীদ ছাত্র-জনতাকে স্মরণ
প্রধান বিচারপতি বলেন, শুরুতেই কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি গণজাগরণে আত্মদানকারী প্রত্যেক শহীদের স্মৃতির প্রতি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানের সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই এখনো চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। তাদের সবার দ্রুত নিরাময় ও সুস্থতা কামনা করছি।

‘আমি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহবুবুর রহমান মুগ্ধ, মো. ওয়ামিস আকরামসহ আরও অসংখ্য শহীদদের। ’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সব মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনকে। অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। তাদের অশেষ আত্মত্যাগের কারণে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে ২৫তম প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায় ইতিহাসের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে আমাদের পূর্বপুরুষরা সবসময় ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অধিকারের সুরক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। সেসব ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের সর্ব-সাম্প্রতিক সংগ্রামটি হলো ২০২৪ সালের সংঘটিত আমাদের এ গণঅভ্যুত্থানে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, আমাদের বীর ছাত্র-জনতা ইতিহাসের এক মহাক্রান্তিকালের অনিবার্য আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক মহা-জাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন।

সবকিছু করার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে যাব
প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সফল বিপ্লবের দ্বারা অর্জিত একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার যুগ সন্ধিক্ষণে আপনারা আমাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এজন্য আমি আপনাদের প্রদত্ত এ গুরুদায়িত্ব কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মাথা পেতে নিলাম। বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের যে সুবিশাল বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে অর্পিত হয়েছে সেই দায়িত্ব আমি সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে সচেষ্ট হবো। আমি অবগত আছি যে, আপনাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু আমার হাতে সময় খুবই কম। তারপরও গণঅভ্যুত্থান উত্তর সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অধিকারের সুরক্ষা ও সুবিচারের সংস্কৃতির সুপ্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করণীয় আমি তার সবকিছু করার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে যাব।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings