X

শূন্য থেকে শুরু আয়েশার

সাবিকুন্নাহার আয়েশা একজন উদ্যোক্তা, একজন প্রশিক্ষক। তার অনলাইন প্রতিষ্ঠান চিত্রণ, যেখানে রয়েছে শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে হ্যান্ডপেইন্ট এর যাবতীয় পণ্য। পণ্যগুলো সারাদেশ তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে। প্রবাসী অনেক বাংলাদেশী আয়েশার রিপিট ক্রেতা।

চিত্রণের উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে হ্যান্ডপেইন্ট করা মসলিন শাড়ি, থ্রিপিস, ওড়না, বোতল পেইন্টিং, ক্যানভাস ইত্যাদি। চিত্রণ বেশিরভাগ কাজ প্রি-অর্ডারে করে থাকে, তাই কাস্টমাইজ করে পোশাক তৈরি করার শতভাগ সুযোগ রয়েছে। স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি বাজেট থেকে শুরু করে শৌখিন শাড়ির জন্য বিভিন্ন বাজেটের পণ্য রয়েছে চিত্রণে।ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে সেল পোস্ট এবং লাইভ রিলেটেড সমস্যার পড়ে “হ্যান্ডপেইন্ট অ্যান্ড ক্রাফটিং বিডি অফিসিয়াল নামে” একটি গ্রুপ চালু করেন আয়েশা, যা বর্তমানে ৫ লাখ ৪১ হাজারের একটি পরিবার। গ্রুপটিতে রয়েছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। আয়েশাসহ সকল উদ্যোক্তা তাদের কর্মকাণ্ড সেখানে উপস্থাপন করে থাকেন।আয়েশার আরো একটি পরিচয় তিনি একজন প্রশিক্ষক। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাচ তার কাছ থেকে হ্যান্ডপেইন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়েছে। তারা কম-বেশি সকলেই উদ্যোক্তা হয়েছেন, সফলতার সাথে তাদের উদ্যোগ পরিচালনা করছেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা কাজ করছেন নাকি ঝরে পড়ছেন এই বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয় বলে জানান উদ্যোক্তা সাবিকুন্নাহার আয়েশা। নিজ উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ থেকে এখন বেশ ভালো ডিজিটের অর্থ প্রতিমাসে আয় করতে পারেন তিনি।

 

সাবিকুন্নাহার আয়েশা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন “আপনারা অনেককেই হয়তো শূন্য থেকে শুরু কথাটি বলতে শুনেছেন। আর আমি সেটির বাস্তব উদাহরণ। কোন অর্থ ব্যয় না করে শুধুমাত্র আমার আঁকার গুণটিকে পুঁজি করে আমার শুরু। আমার চিত্রণের পণ্য এখন দেশ বিদেশে যাচ্ছে। আমার পরিবার আগে সম্মতি না দিলেও আজ তারাই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। যা শুধুমাত্র পরিশ্রম ও সাহসের জন্য সম্ভব হয়েছে। আমাদের আশপাশের অনেক গুণী লোক আছেন যারা বিভিন্ন কাজে পারদর্শী, কিন্তু অধিক পুঁজি ও পরিবারের সাপোর্ট না থাকায় তারা সামনে এগোতে পারেন না। আমি বলবো এটা বোকামি। আমাদের শুরু করা উচিৎ। শ্রম দিলে সফলতা একসময় আসবেই।”আয়েশা ক্লাস টু-থ্রিতে থাকতেই বুঝতে পেরেছিলেন আঁকাআঁকি তার ভীষণ পছন্দের। বাবা-মাকে বললেও তারা প্রথমদিকে মেয়ের বায়নায় সায় দিতেন না। আয়েশার তখন ক্লাস ফোর, তিনি যে বাসাতে থাকতেন পাশের ইউনিটে তারই সমবয়সী একজন ড্রয়িং শিখতেন। আয়েশা তার আঁকা দেখে-দেখে এসে বাসায় অনুশীলন করতেন। পরে তার বড় বোন এবং শুভাকাঙ্ক্ষী আরেক বোনের সহযোগিতায় বিষয়টি পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।এভাবে কয়েক বছর কেটে যায়। সময় এলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। চারুকলা অনুষদে ভর্তির প্রিপারেশন নিলেন আয়েশা। স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়েও গেলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলে গেলো, কিন্তু হঠাৎ ফোন বাসা থেকে মায়ের অসুস্থতা। পরিবারের খুব একটা সম্মতি না থাকায় ফিরে আসতে হলো আয়েশাকে। স্বপ্ন কি তাহলে এখানেই শেষ? এর কিছুদিন না যেতেই এক সহপাঠী এসে বললেন, তুই তো খুব ভালো আঁকতে পারিস; আমি তোকে রঙ আর কাপড় দেব, তুই আমাকে একটা ড্রেস করে দে। ব্যস শুরু জীবনের নতুন অধ্যায়।

 

সহপাঠীকে করে দেওয়া সেই ড্রেসটার ছবি সামাজিক পাতায় বিভিন্ন গ্রুপে আপলোড করতেই অর্ডার আসা শুরু। সারা বাংলাদেশ থেকে একই ডিজাইনের সেই ড্রেসটির জন্য ৪০টি অর্ডার হয়। আয়েশা আরো বেশি কৌতুহলী হয়ে উঠেন। আরো বেশি সময় দিতে শুরু করেন উদ্যোগে। গুগল থেকে পড়াশোনা, নিজের অনুশীলন সব মিলিয়ে ধীরে-ধীরে রংতুলির বিষয়গুলো আয়েশার কাছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়।আয়েশা এখন নিজে তো স্বাবলম্বী বটেই, পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। মেয়ের এমন সাফল্যে এখন বাবা-মা-ও গর্বিত। মেয়ের ব্যস্ততায় বাবা নিজ থেকেই এখন কুরিয়ারসহ উদ্যোগ রিলেটেড বিভিন্ন কাজে মেয়েকে সহযোগিতা করেন। এই উদ্যোক্তা বাবার চাকরি সুবাদে বিভিন্ন স্থানে মিলেমিশে শৈশব কৈশোর কাটিয়েছেন। বর্তমানে তারা সারদা পুলিশ একাডেমিতে বসবাস করছেন। উদ্যোক্তা সাবিকুন্নাহার আয়েশা এখন রাজশাহীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অধ্যয়নরত। আগামীতে আয়েশা তার উদ্যোগ চিত্রণ এর পরিসর বাড়িয়ে অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings