X

শেখ হাসিনাকে ঘিরে আল জাজিরার ৪৯ মিনিটের তথ্যচিত্রে কী উঠে এসেছে

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা। বর্তমানে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি তৃণমূলের নেতারাও পালিয়ে, আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়া গণহত্যার দায়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।
রক্তক্ষয়ী এই অভ্যুত্থানের পর একে একে বেরিয়ে আসছে গত ১৬ বছরের হাসিনার দানবীয় শাসন আমলে সংঘটিত গুম খুন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর নানা তথ্য উপাত্ত। ইতিমধ্যে এসব তথ্যের সুস্পষ্ট প্রমাণও পেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)-এর তথ্যানুসন্ধান দল।
এদিকে সম্প্রতি শেখ হাসিনা ও তার দলের গুম, খুন, জুলাই অভ্যুত্থানের সংঘটিত গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পুনর্গঠন নিয়ে ৪৯ মিনিটের একটি বিশেষ তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
শুক্রবার প্রকাশিত এ তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আইনজীবীর। এ ছাড়া এই তথ্যচিত্রে নিজেদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার প্রকাশ করেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নির্যাতন ও গুমের শিকার একাধিক ব্যক্তি ও তার স্বজনরা। তাদের কণ্ঠে উঠে আসে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আয়নাঘরসহ বিভিন্ন অপকর্মের চিত্র।
এছাড়া সংবাদমাধ্যমটির বিশেষ এ তথ্যচিত্রে আরও উঠে আসে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার তথ্যও। পাশাপাশি হাসিনার শাসন আমলে কীভাবে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে সেই চিত্রও তুলে ধরেছে কাতারভিত্তির এ সংবাদমাধ্যমটি।
সংবাদমাধ্যমটি আরও তুলে ধরে, ২০১৪ সালে হাসিনা জয়ের জন্য কীভাবে গুমের রাজনীতি শুরু করে। তৎকালীন বিএনপি নেতা ও সমাজকর্মী সাজেদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে গুম করে হাসিনা সরকার।

এ বিষয়ে গুমের শিকার সাজেদুল ইসলামের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি আল জাজিরাকে জানান, ভাইকে খুঁজে না পেয়ে গুম হওয়ার ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন চালু করেন তিনি। শুরুতে ৮টি পরিবারকে নিয়ে যাত্রা করলেও এ সংগঠনে এখন প্রায় ১ হাজার গুমের শিকার পরিবার অন্তর্ভুক্ত। প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আশায় এখনো প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকেন তারা। গুম হওয়া ব্যক্তিরা এখনো জীবিত আছেন নামি মৃত তাও জানেন না স্বজনরা।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার এমন নৃশংস গুমের শিকার হয়েছে বেঁচে ফেরা তিনজন আলোচিত ব্যক্তি হলেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী, আবদুল্লাহিল আমান আযমী, ব্যারিস্টার আরমান। ৫ আগষ্ট হাসিনা পালানোর পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই তিনজনকে আটকে রাখা হয় আয়না ঘরে। ডিজিএফআই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্জন অন্ধকার রুমে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয় তাদের।

গুম হওয়া আলোচিত এই তিন ব্যক্তি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, আয়না ঘরে যাদের রাখা হতো তাদেরকে সব সময় হাত বেঁধে রাখা হতো। কারো সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে দেওয়া হতো না।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী আল জাজিরাকে জানান, অন্ধকার একটি ছোট্ট রুমে তাকে চোখ বেঁধে মুখোশ পড়িয়ে রাখা হতো। আশপাশের কোনো শব্দ শুনতে পেতেন না তিনি।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর একে একে সামনে আসতে থাকে নৃশংস আয়না ঘরের চিত্র। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত এসব গুমঘর পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস।

হাসিনার আমলে গুমের শিকার আরও একজন রাজন ব্যাপারি। তার গুম হওয়ার কারণ ও তার ওপর চালানো নৃশংসতার নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটিতে তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলাগুলোর ত্রুটি নিয়ে একটি বই লিখেন তিনি। এই অপরাধে বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মুখে কালো কাপড় বেঁধে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছুই জানতেন না রাজন। দিনের পর দিন নৃশংস নির্যাতন চালিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় কেন তিনি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বই লিখেছেন। নিজের ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজন।

গুম, খুন, বিচারবর্হিভুত হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল হাসিনার সরকার। এসব তথ্যও প্রকাশ করে আল জাজিরা।

আইএমএফ’র সাবেক অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার শাসন আমলে ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে। হাসিনা বিভিন্ন কোম্পানিকে হাজার হাজার টাকার ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, শুধু ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা নয়, নিয়ন্ত্রণের নামে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক ডাকাতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর এসব অর্থ দেশের বাহিরে পাচার করা হয়েছে।

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings