X

সত্য কথা লিখবেন, আমি যা তাই লিখবেন: সাংবাদিকদের সুব্রত বাইন

রিমান্ড শুনানির আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সত্য কথা লিখবেন। আমি যা তাই লিখবেন। অন্য কিছু লিখবেন না। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। সাংবাদিকরা ১৯৮৯ সাল থেকে লিখতেছে। কিন্তু জায়গামত পৌঁছাতে পারেনি।
বুধবার (২৮ মে) বিকালে আদালতে উঠার আগে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে বলেন সুব্রত। কিন্তু এর মধ্যেই তার সঙ্গে আরেকজন কথা বলতে চান। তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে সুব্রত বলেন, ‘যা বলার আমি বলব’।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর ৩টা ৪২ মিনিটে কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। আসামিদের মাথায় হেলমেট, শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল।
শুনানি শুরুর আগে সাংবাদিকদের নিয়ে সুব্রত বলেন, সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারও কাছে কোনো প্রমাণ নাই। বাঁচার জন্য কে কি না করে। কত মানুষ মরে পচে গেছে। ঘাসও পচে গেছে। বেঁচে আছি, আল্লাহ জীবন্ত রেখেছেন।
এসময় আদালতে তিনি তার আইনজীবীকে খোঁজেন। বলেন, মজিবর ভাই কই। আমার উকিল কই।
পরে আবার বলেন, সাংবাদিকরা কিছু না জেনে লিখে দেয়। আমারও তো পরিবার আছে। কী এফেক্ট পড়ে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি ১৯৮৭ সাল থেকে।
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী।অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথা জানায় আইএসপিআর। গ্রেফতারের পর বুধবার তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে। যদিও বুধবার আদালতে চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন সুব্রত বাইন।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা এত খবর রাখে, আড়াই বছর আগে আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই। এখন আমাকে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ বানানো হচ্ছে। প্রমাণ দিয়ে দেখান আমি চাঁদাবাজি, ছিনতাই করেছি কিনা।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে পত্রিকা অফিস, টিভি অফিস খুলে নিতাম। আমার কোনো পাওয়ার নাই, পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।
সুব্রতর দাবি, গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আগে তাকে ‘আয়নাঘরে’ রেখে নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে দেশে নিয়ে আসে। আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়। যা কবরের মত। রড দিয়ে পিটিয়েছে। দেখেন আমার মাথায় কী করছে।
মাথায় হাত দিয়ে দেখাতে দেখাতে তিনি বলেন, এখনো বেঁচে আছি। ৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়।
সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের সময় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সুব্রতর দাবি, নিজের নিরাপত্তার জন্যই সঙ্গে অস্ত্র রাখেন।
তার কথায়, কে মরতে চায়। ৮৪/৮৫ থেকে আমার শত্রুতা। লিয়াকত, মুরগী মিলন, আমির হোসেন আমু আমার এন্টি (প্রতিপক্ষ) ছিল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখানে আসছি।
সুব্রতের এসব কথা বলার পর বিচারক এজলাসে ওঠেন। কাঠগড়ায় আসামিদের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খোলা হয়। তখন সুব্রত হাসতে থাকেন৷ পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘আরেক হাতের হাত কড়া খুলে দিতে বলেন’। তবে পুলিশ সদস্যরা এতে আপত্তি জানান।
বিচারকের উদ্দেশে সুব্রত বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাতকড়া পরে দাঁড়ানো যায়। যতটুকু আইন জানি, আদালতে দাঁড়ানোর সময় হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাখে না। তাহলে আদালতের সম্মান কী রইল।
আদালতে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই রিয়াদ আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
আদালতে প্রসিকিউশন বিভাগের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
তখন সুব্রত বলেন, মোবাইলটা দেখান। চায়না ফোনকে স্যাটেলাইট ফোন বলছে। ওটা সিটিসেল মডেলের চায়না ফোন।
শুনানি নিয়ে বিচারক সুব্রতসহ চারজনের রিমান্ড আদেশ দেন। এরপর আদালতকে সুব্রত বলেন, আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। নামাজের ব্যবস্থা যেন থাকে।

Categories: Uncategorized
firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings