প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস: সাত মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ ঢাকা – বিবিসি বাংলার সঙ্গে সম্প্রতি একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের গত প্রায় সাত মাসের কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ চলমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। আবির্ভাব ও শুরুটা ড. ইউনূস জানান, যখন সরকার গঠন হয়েছিল, তখন দেশের অবস্থা এক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। আইন-কানুনের অভাবে প্রতিদিনই নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানান, “প্রেফতার আতঙ্ক আমার কাছে কখনোই ছিল না।” তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে দেশের আসল চেহারা তুলে আনা এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তোলা। সংস্কার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সরকার গঠনের পর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে, ড. ইউনূস বলেন যে সংস্কারের কাজ এখনও শুরু হয়েছে, কিন্তু পূর্ণতা লাভে অনেক সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনটি নির্বাচনের মধ্যেও ভোটারের উপস্থিতি কম থাকার ফলে দুর্নীতি ও ব্যর্থতার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে যা ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার কথা ছিল, তবে কিছু বিলম্ব হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠলেও, ড. ইউনূস জানান যে, অপরাধের পরিমাণ আগের মতোই আছে। তবে, পুলিশের কার্যক্রমে প্রাথমিক সময়ে কিছু সমস্যা দেখা গেছে—ভয় ও অনুপস্থিতির কারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব। বর্তমানে কিছুটা নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যদিও পরিস্থিতি পুরোপুরি উন্নয়নশীল বলে তিনি উল্লেখ করেন। ছাত্র নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সরকারে ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দলের গঠন ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ড. ইউনূস ব্যাখ্যা করেন, ছাত্ররা নিজেদের রাজনৈতিক দলে সংগঠিত হয়েছে, কিন্তু সরকার তাদের সরাসরি কোনো সহায়তা প্রদান করে না। তাদের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে রাজনৈতিক দলের মতামত ও সহযোগিতা দেখা যাবে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির প্রশ্নে ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ভালো অবস্থায় আছে। অপপ্রচারের কারণে মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলেও, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতার কারণে সম্পর্কের অবনতির সম্ভাবনা কম। তাঁর মতে, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সবসময় উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। উপসংহার ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা রাতারাতি দেশ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি না; সময় ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়িত হবে।” তাঁর বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অনেক কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও উন্নতি আনতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।