X

সিন্ডিকেটে বেড়েছে মুরগির বাচ্চার দাম, আড়াই মাসে লুটপাট ৭২০ কোটি

কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই দেশের বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মুরগির বাচ্চার দাম। গত আড়াই মাস ধরে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে মুরগির বাচ্চা কিনতে হচ্ছে খামারিদের। এতে করে সংকটের মুখে পড়েছে দেশের পোল্ট্রি খাত। একইসঙ্গে খামারিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হচ্ছে, গত আড়াই মাসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ৭২০ কোটি টাকা সাধারণ খামারিদের পকেট থেকে লুটপাট হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে মুরগির বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং দাম নিম্নমুখী হয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশের পোল্ট্রি খাতের জন্য একটি আশার আলো হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতে গত আড়াই মাসে একটি গুরুতর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা খামারিদের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে মুরগির বাচ্চার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, সিন্ডিকেটের প্রভাব এবং ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগি লালনপালন খামারিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, মুরগির বাচ্চা, পোল্ট্রি ফিড ও পশু খাদ্য উৎপাদনে শীর্ষ কোম্পানিগুলো হচ্ছে — নাহার অ্যাগ্রো পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, কাজী ফার্মস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, সিপি বাংলাদেশ, নারিশ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, ডায়মন্ড পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি। এসব কোম্পানি মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটে এবং ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবে কোনো কারণ ছাড়াই গত আড়াই মাসে মুরগির বাচ্চার দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছ।

পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাজারে একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে ৬০-১০০ টাকায় পৌঁছায়। আর গত ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ৮০ দিন মুরগির বাচ্চায় অতিরিক্ত দামের এই সিন্ডিকেট চলমান ছিল। প্রতিদিন দেশে সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ৩০ লাখ পিস। কোম্পানিগুলো যদি ১টি মুরগির বাচ্চায় গড়ে ৩০ টাকা বেশি নিয়ে থাকে তাহলে ১দিনে ৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়েছে। এভাবে গত আড়াই মাসে (৮০ দিনে) ৭২০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যা খামারিদের পকেট থেকে লুটপাট হয়েছে। পোল্ট্রি ফিড এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মিনিটে-ঘণ্টায় দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করেছে। এসব অসাধু সিন্ডিকেটের কার্যক্রম প্রান্তিক খামারিদের ওপর গুরুতর চাপ তৈরি করেছে। যার ফলে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

বাচ্চার এবং ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের পুঁজি হারাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক খামারি লাভজনক না হওয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার ফলে শিক্ষিত নারী, বেকার যুবক উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়েছে এবং খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধার মুখে পড়েছে।

তাই এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে এবং বাজার স্বাভাবিক করতে বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

Categories: জাতীয়
Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings