X

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে স্বস্তি ফিরবে না ডিম-মুরগির বাজারে

কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের কারণে ডিম এবং মুরগির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে না।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করে। আর কর্পোরেট গ্রুপের অবদান মাত্র ২০ শতাংশ। তবুও কর্পোরেট গ্রুপগুলোর কৌশলগত বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। যেখানে প্রান্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদনে ১০ দশমিক ৫০ পয়সা থেকে ১১ টাকা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ১৫৫-১৭০ টাকা, ১ কেজি সোনালি মুরগি উৎপাদনে ২৪০-২৬০ টাকা খরচ হয় সেখানে কর্পোরেট গ্রুপের ১টি ডিম উৎপাদন করতে মাত্র ৮-৯ টাকা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ১৩০-১৪০ টাকা এবং ১ কেজি সোনালি মুরগি উৎপাদনে ২০০-২২০ টাকা খরচ হয়। এর মাধ্যমে কর্পোরেট গ্রুপগুলো কৌশলগতভাবে দাম কমিয়ে বাজার দখল করে প্রান্তিক খামারিদের দুর্বল করে দিচ্ছে। বিপরীতে প্রান্তিক খামারিরা উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণে লাভ করতে পারে না। ফলে তাদের অনেকেই পোল্ট্রি বন্ধ করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা দেশের পোলট্রি শিল্পের মেরুদণ্ড। যদি তাদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে কর্পোরেট গ্রুপ বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। যখন ডিম বা মুরগির দাম বৃদ্ধি পায়, তখন সারা দেশে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপও দেখা যায়। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে কেন সরকার কোন ব্যবস্থা নেয় না? কেন তার প্রতিক্রিয়া থাকে না? ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব প্রান্তিক খামারির ওপর পড়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না এবং তাদের উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে। এই অস্থিরতার কারণে, খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এবং তাদের জন্য টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে, যখন খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং তারা এই খরচ তুলতে না পারলে, বাজারে আস্থাহীনতা এবং অস্থিরতা তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষ্যে ডিম এবং মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে সঠিক দাম নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিপিএ’র উদ্যোগে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী ১২ জানুয়ারি (রোববার) থেকে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি, যেন এই উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে এবং ডিম-মুরগির বা স্বস্তি নিশ্চিত করা যায়, পাশাপাশি দেশের কৃষক ও ভোক্তাদের জন্য সঠিক দাম নিশ্চিত করা যায়।

সুমন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, পোলট্রি শিল্পে বর্তমানে একটি মারাত্মক সংকট চলছে। যার মূল কারণ হলো ফিড এবং মুরগির বাচ্চার বাজারে সিন্ডিকেট। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যের মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এসময় তিনি সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —

১. বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডিম ও মুরগি উৎপাদনে অংশ নিয়েছে। যার ফলে ছোট খামারিরা বাজারে অবস্থান নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা দাবি করছে যে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। যাতে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারেন।

২. কর্পোরেট কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদন প্রান্তিক খামারিদের জন্য ক্ষতির কারণ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যায়। যা খামারিদের জন্য লাভজনক নয়। এই কার্যক্রম বন্ধ হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং খামারিরা লাভবান হতে পারবেন।

৩. ফিড এবং মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি হয়, যা প্রান্তিক খামারিদের জন্য বড় সমস্যা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ানোর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছেন না। তাই এই সিন্ডিকেট বন্ধ করে, খামারিদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. দেশের পোলট্রি খাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন না, যা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা তৈরি করছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়তে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য সঠিক দাম পায়।

৫.খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে ঋণ ও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করা হলে তারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় পোলট্রি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে।

৬. কর্পোরেট সিন্ডিকেট ও অসাধু কার্যক্রমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। এই প্রণোদনা তাদের ব্যবসা
চালিয়ে যেতে সহায়ক হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

৭. কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক খামারিদের জন্য আলাদা বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহ করতে পারে এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সঠিক মূল্য পায়।

৮. পোলট্রি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করতে হবে, যাতে তারা শুধু তাদের স্বার্থে ব্যবসা না করে বরং পুরো খাতের উন্নতি হয় এবং প্রান্তিক খামারি দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির সুফল পায়।

৯. বর্তমানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিস্টেমটি বন্ধ করা জরুরি। যাতে খামারিরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালাতে পারে এবং নিজেদের লাভের ভাগ পেতে পারে।

১০. খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা চালু করতে হবে। এটি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং একই সাথে তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings