গ্রাম-বাংলার কোনো পথ দিয়ে হেঁটে গেলে অনেক পাখির সুরেলা কণ্ঠ কানে আসে। সেসব পাখির মধ্যে তিলা ঘুঘু অতি পরিচিত সুরেলা কণ্ঠের পাখি। গ্রামের মাঠে-ঘাটে, শস্যভিটায়, সুনিবিড় কোনো পথে একাকী বা জোড়ায় হেঁটে হেঁটে মাথা দুলিয়ে শস্যদানা খুঁজে বেড়ায় তিলা ঘুঘু।
মানুষের উপস্থিতি টের পেলে একটু থমকে দাঁড়ায়, তারপর দেখেশুনে আবারও হাঁটতে শুরু করে। মানুষের দূরত্ব যদি নিরাপদ সীমার বাইরে চলে যায় তখন ডানা ঝাপ্টিয়ে উড়াল দেয়। তিলা ঘুঘু শান্ত পাখি। গ্রামে মানুষের বসতির কাছেই এরা জীবনচক্র চালিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন শহরের আবাসিক এলাকাতে কম করে হলেও একজোড়া তিলা ঘুঘু দেখা যায়।
গ্রাম-বাংলায় সহজেই তিলা ঘুঘুর দেখা মেলে। ছেলেবেলায় গ্রামে দেখতাম কাউবয় হ্যাট পরে অনেক শহুরে সাহেব এয়ারগান নিয়ে গ্রামে পাখি শিকারে আসতেন। তারা যেসব পাখি শিকার করতেন তার মধ্যে তিলা ঘুঘু থাকত সবচেয়ে বেশি। এখন গ্রামের মানুষ অনেক সচেতন, এয়ারগানও নিষিদ্ধ। তাই তিলা ঘুঘুর সংখ্যা দেশে ভালোই আছে। তবে বনের এ ঘুঘু পাখিকে পাখির দোকানসহ দেশের অধিকাংশ পাখি ফেরিওলাদের খাঁচায় দেখা যায়। এ বিষয়টি বন্ধের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার।
তিলা ঘুঘু লোকালয়ের সুপরিচিত পাখি। মাথার চাঁদি ও কান-ঢাকনি ধূসর। ঘাড়ের পেছনের উপরিভাগ পাটল বর্ণের। ঘাড়ের পেছনের নিচের ভাগ ও ঘাড়ের পাশ সাদা-কালো তিলার পট্টি। বাদামি পিঠ ও ডানায় পীতাভ তিলা রয়েছে। চোখ ফিকে লালচে বাদামি, চোখের পাতা ও চোখের গোলকের মুক্ত পট্টি অনুজ্জ্বল গাঢ় লাল। ঠোঁট কালচে শিং রাঙা। পা ও পায়ের পাতা লালে মেশানো এবং নখ বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।
তিলা ঘুঘু আর্দ্র পাতাঝরা বন, বাগান, কুঞ্জবন, আবাদি জমি, গ্রাম ও শহরে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। ছেলে পাখি ডাকতে পছন্দ করে। প্রজনন মৌসুমে, এপ্রিল-জুলাই মাসে ছেলে পাখি মেয়ে পাখির পাশে মাথা নাচিয়ে অবিরাম ডাকে। কোমল সুরের ডাক, ক্রক… ক্রকু…ক্র..। কাঁটাওয়ালা ঝোপ, বাঁশঝাড়, খেজুর ও অন্যান্য ছোট গাছে কাঠি বিছিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা বর্ণের। ১৩ দিনে ডিম ফোটে।
পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকাজুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ বর্গকিলোমিটার।