X

সুশীল সমাজের তোপের মুখে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ডিডি

অফিস সময় শুরুর আগেই বিশেষ কিছু ফাইলে সই করে দেন রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক (ডিডি) রোজী খন্দকার। তারপর এসব ফাইলের পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ছবি তোলার কাজ শুরু হয়। সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অভিযোগ রয়েছে, দালালের মাধ্যমে যেসব ফাইল জমা হয় সেগুলোর কাজই শেষ হয় দ্রুত।

কয়েকমাস ধরে চলা এমন অনিয়মের প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে রাজশাহীর সুশীল সমাজ। বুধবার সকালে নগরের শালবাগান বাজারে পাসপোর্ট অফিসের সামনে মানববন্ধন করে এই অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার দাবি জানানো হয়েছে। পরে উপপরিচালক রোজী খন্দকারের সঙ্গে দেখা করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে একমাসের সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে নাগরিক ভোগান্তি দূর না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

‘ভুক্তভোগী রাজশাহীর সাধারণ জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, ক্যাবের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেন, রাজশাহী ওয়েব’র সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি, নারীনেত্রী রোজিটি নাজনীন, সেলিনা বেগম প্রমুখ।

মানববন্ধনে হয়রানির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা বলেন, দালালের মাধ্যমে আসা বিশেষ ফাইলগুলো সরাসরি দোতলায় উপপরিচালক রোজী খন্দকারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এসব ফাইলে সই করে দেন। তারপর দোতলাতেই সহকারী পরিচালক এসব ফাইল কম্পিউটারে এন্ট্রি করেন। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাইলগুলো নিচতলায় চলে আসে। সেখানে ছবি তুলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা বাড়ি ফিরে যান। আর যারা দালালকে অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে নিজেরাই এসে লাইনে দাঁড়ান, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিচতলায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েই থাকতে হয়। এর ফলে রোজ অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভোক্তভোগি আবু সাইদ বলেন, দালাল না ধরে ফাইল আনলে শুধু ভুলই খোঁজেন কর্মকর্তারা। আর দালালের মাধ্যমে ফাইল এলে কিছুই দেখা হয় না। দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের প্রত্যেক কর্মকর্তা প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামাই করছেন।

তিনি বলেন, আর নিচতলায় একজন ব্যক্তি সাধারণ মানুষের পাসপোর্টের ফাইল এন্ট্রি করেন। মাঝে মাঝেই তিনি আবার ডেস্ক ছেড়ে উঠে যান। ফলে সাধারণ মানুষের লাইন আর এগোয় না। এসব অনিয়ম অচিরেই বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসের জনবল ও ছবি তোলার কক্ষ বৃদ্ধি করতে হবে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়।

আফসার হোসেন নামের এক ভোক্তভোগি বলেন, আমি প্রথমে সরাসরি জমা দিয়েছিলাম। ভুল আছে বলে ফেরত দেয়। পরে দালালকে দেওয়া হলে সেটিই গ্রহন করে। এ জন্য দালালকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা ফাইল প্রতি ১২০০ টাকা নেন বলেও দাবি তারা।

এদিকে, মানববন্ধন শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব বিষয় নিয়ে উপপরিচালক রোজী খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে তার কক্ষে যান। এ সময় রোজী খন্দকার সব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে বলেন। এছাড়াও জোরপূর্বক অফিসে প্রবেশের অভিযোগ তুলে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ততা দেখান। এ সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়ছেন উপ-পরিচালক রোজী খন্দকার। এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান তাঁকে হুশিয়ার করে বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে নাগরিক ভোগান্তি দূর করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

জানা গেছে, উপপরিচালক রোজী খন্দকার পাসপোর্টের ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আবু আসাদ যখন পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ছিলেন তখন তাঁর ছত্রছায়ায় তৎকালীন পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসে। এই সিন্ডিকেটভুক্ত ২৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়।

তারা প্রতিদিন অন্তত ২৫ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন বলে তাদের জি-২৫ সিন্ডিকেটের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পান। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই সময় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে দুদক।

এই সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ও ভারতীয়দের নামে পাসপোর্ট ইস্যু, একই ব্যক্তির বিভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট ইস্যু, দালাল-সিন্ডিকেট প্রতিপালন, পদোন্নতি প্রদান, প্রাইজ পোস্টিং দেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। রাজশাহীর এখনকার উপপরিচালক রোজী খন্দকার ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্পে কর্মরত থাকাকালে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই মানুষকে জিম্মি করে উপরি উপার্জনের অভিযোগ ওঠে।

রাজশাহীতে আসার আগে তিনি ছিলেন জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। তিনি সেখানে থাকার সময়ও দালালদের প্রতিপালন করতেন। দালাল না ধরলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। কয়েকমাস আগে তিনি রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার পর একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিচালক রোজী খন্দকার বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

তবে এর আগে তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বলেন, ঘুষ নেয়ার প্রমান পাওয়া গেলে এক দিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings