আধুনিক চাষী রমজান আলী। সোনারগাঁয়ের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গৌরবরদী গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। বাবা কৃষক তাই তিনি কৃষিতে আগ্রহী হয়েছেন। বিএসএস পাস করে তিনি চাকুরীর পেছনে সময় নষ্ট না করে চাষবাসে সময় দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকেই তিনি কৃষিতে হাতেখড়ি নিয়েছেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিভাগে তিনি প্রথম মালচিং চাষ পদ্ধতি শুরু করেন।
টমেটো ও চিচিঙ্গা চাষের মধ্য দিয়ে তার মালচিং চাষ পদ্ধতি শুরু হয়। পরবর্তীতে একে একে তিনি দেশী ও বিদেশী সবজি ও ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বর্তমানে তিনি উন্নত প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের বীজ থেকে উৎপাদন করে থাকেন। আবহাওয়া ও বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি আধুনিক চাষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফষল উৎপাদন করছেন। বর্তমানে তিনি গ্রীষ্মের ফল তরমুজ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাড়ে ৫বিঘা জমির চারপাশে তিনি মাচা দিয়ে কালাচাঁন ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করছেন। সেখানে হলুদ ও কালো রঙের তরমুজ থোকায় থোকায় ছোট বড় ঝুলে আছে। ১০-১৫ দিন পর রমজান আলীর ফলানো তরমুজ বাজারে আসবে। পাশাপাশি তিনি পুকুর পাড়ে করলা ও লাউ চাষ করেছেন। তিনি স্থানীয় কৃষকদের প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিনে গেলে রমজান আলী জানান, তিনি ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই কৃষি কাজে আগ্রহী হয়েছে। চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে তার ভালো লাগে। গতানুগতিক চাষ পদ্ধতি বাদ দিয়ে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে। উন্নত উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ রোপন করে তিনি ফসল উৎপাদন করেন। ইউটিউব দেখে ও কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে তিনি কৃষিতে সাফল্য অর্জন করেছেন। টমেটো, রঙিন ফুলকপি, স্কোয়াশ, শশা, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি উৎপাদন করেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে তরমুজ, করলা ও লাউ উৎপাদন করছেন। তার উৎপাদিত ফসল তিনি যাত্রাবাড়ি ও গাউছিয়া কাচাঁবাজার ও ফলের আড়তে বিক্রি করেন।
রমজান আলী আরো জানান, তিনি চাকুরি ও প্রবাসে যাওয়ার কথা চিন্তা না করে ভালো করেছেন। কৃষিকে তিনি হালাল টাকা উপার্জনে একমাত্র স্বাধীন পেশা হিসেবে গন্য করেন। আধুনিক কৃষি থেকে তিনি মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করার কারনে তার আয় করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যান্য কৃষকরা কৃষি কাজে সফলতা অর্জন করতে না পেরে আগ্রহ হারাচ্ছেন। সেখানে তিনি আয় করে যাচ্ছেন। কৃষকদের তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি অল্প বিনিয়োগে দ্বিগুন লাভে ফসল উৎপাদন করেন। তার দাবি, ঢাকা বিভাগে মালচিং চাষ পদ্ধতিতে তিনিই প্রথম চাষবাস শুরু করেন। তাকে দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তার গ্রামেই নয়, বিভিন্ন স্থানে এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।
গৌরবদী গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, রমজান আলী এ এলাকার কৃষকদের প্রেরণা। তার পরামর্শে এ এলাকার কৃষকরা চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করে লাভবান হয়েছেন। তিনি পোকা মাকড় দমনের জন্য জৈব চাষ পদ্ধতি অনুসরন করেন। ফলে অর্গানিক বাম্পার ফলন উৎপাদন হয়।
নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, কৃষি প্রধান এলাকা হলেও কৃষকরা এক সময় চাষবাস করে লাভবান হতে পারিনি। রমজান আলীর কৃষিতে চমক দেখাচ্ছেন। দেশী ও বিদেশী সবজি ও ফল উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করছেন। তাকে দেখে, ও তার পরামর্শ নিয়ে এ এলাকার অনেক কৃষকরা লাভজনক কৃষিতে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তরমুজ একটি লাভজনক চাষাবাদ। অল্প সময়ে কম খরচে কৃষকেরা অধিক লাভবান হয়ে থাকেন। দু’মাসে ফলন পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে অল্প সময়ে লাখ টাকার ওপরে আয় করা সম্ভব। মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত আধুনিক চাষী রমজান আলীকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা জানান, প্রতি নিয়ত তিনি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া রমজান আলী তরমুজ চাষ এ এলাকার চাষীদের জন্য অনুকরণ হতে পারে। তার দেখানো পথে চাষবাস করলে চাষীরা লাভবান হবেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে রমজান আলীকে সার, বীজ ও কিটনাশকসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক বলেন, রমজান আলীর এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের কৃষির নতুন সম্ভাবনার দিক দেখাচ্ছে। বর্ষাকালে মাচায় তরমুজ চাষ একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। এতে করে অনাবাদি কিংবা জলাবদ্ধ এলাকার জমিও ব্যবহার করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে এখন তরমুজের চাহিদা বেশি, কারণ এটি সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এখন বর্ষাকালে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এর দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।