X

স্বর্ণ চোরাচালান রোধে টাস্কফোর্স, বৈধ পথে ব্যবসা সহজ করতে পদক্ষেপ নিন

দেশে সীমান্ত এবং বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় স্বর্ণ পাচার হচ্ছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি লাভ করতে চোরাকারবারিরা বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ অবৈধভাবে ভারতে নিয়ে বিক্রি করছে। বাংলাদেশের স্বর্ণ বিক্রিতে ভ্যাট ৫ শতাংশ অন্যদিকে ভারতে ৩ শতাংশ। ভ্যাট বেশি থাকার কারণে চোরাকারবারিরা ভারতে স্বর্ণ চোরাচালান করছে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ভ্যাটের হার কমানো হলে চোরাচালানি কমবে। স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্গাপূজা সামনে রেখে ট্রেনেই সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা চলছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চোরাচালান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সীমান্তের বিভিন্ন বন্দরের চোরাকারবারি এবং ইমিগ্রেশন ও রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির সময় অসাধু কাস্টম কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পণ্য কম দেখিয়ে কম মূল্য পরিশোধ করে। সীমান্ত সুরক্ষিত না হলে এ ধরনের কার্যক্রম চলতেই থাকবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের মিথ্যা ঘোষণায় স্বর্ণ প্রবেশ করানো হচ্ছে। একইভাবে মিথ্যা ঘোষণায় ভারতে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈধ পথে স্বর্ণ আনতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বেশি। অথচ অবৈধভাবে যারা স্বর্ণ আনছে তাদের সময় কম লাগছে। বাংলাদেশ থেকে সীমান্তের ৩০ জেলা দিয়েও চোরাইপথে ভারতে স্বর্ণ যাচ্ছে। বিশেষভাবে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে।

তথ্য মতে, বছরে ৯৫ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালান হয়। স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে দেশ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, চোরাই স্বর্ণ কীভাবে আসে, এসব স্বর্ণ কাদের কাছে যাচ্ছে, সেখান থেকে কোথায় যাচ্ছে, সবই খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে চোরাই স্বর্ণ প্রবেশ বন্ধ করা গেলে দেশ থেকে পাচার কমবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে চোরাচালান বন্ধের বিকল্প নেই।

ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণের বার ও অলংকার আনার সুবিধার যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে। তাই ব্যাগেজ রুলসের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন। জল, স্থল ও আকাশপথে অবৈধভাবে স্বর্ণ ও হীরার অলংকার ও বার চোরাচালানিরা নিয়ে আসছে। স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু দেশি ও বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিনিয়ত স্থানীয় বাজারে তারা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে। দেশের পাইকারি বাজার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়। স্বর্ণ চোরাচালান রোধে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বৈধ পথে স্বর্ণের ব্যবসা সহজ করা এবং চোরাচালানের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। স্বর্ণের চোরাচালান রোধে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যা স্বর্ণের আমদানি, বিপণন এবং চোরাচালান প্রতিরোধে সহায়তা করবে। সীমান্তে কড়া নজরদারি বাড়াতে হবে। স্বর্ণ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। চোরাচালান বন্ধ হলে স্বর্ণশিল্প আরও পুনরুজ্জীবিত হবে এবং বৈধ পথে স্বর্ণালঙ্কার বিদেশে রপ্তানি সহজ হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings