X

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ। কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

সূত্র- কালের কণ্ঠ।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings