X

হাজার হাজার কোটি টাকা খরচেও বাড়েনি দেশের গ্যাসের মজুদ

হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাসের মজুদ বাড়েনি। বরং গ্যাস খাতের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে টাকা এলএনজি কিনতে ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ প্রদান করেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে (জিডিএফ) জিডিএফে মাত্র ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো জমা রয়েছে। তবে জিডিএফের অর্থ থেকে স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ৭ হাজার ৪০৩ কোটি টাকায় গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন ও সংস্কারে মোট ৪৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। জ্বালানি বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৯ সালে দেশে গ্যাস খাতের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে অর্থায়নের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) গঠন করা হয়। তহবিল গঠনের তাতে ওই বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ৭০৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা জমা হয়। কিন্তু গ্যাস খাতের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি গ্যাসের মজুদ। বরং জিডিএফ তহবিল থেকে এলএনজি কিনতে ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ প্রদান করার পর তহবিলের বর্তমানে জিডিএফে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো জমা রয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বিগত ১৬ বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ প্রদান ও এলএনজি কিনতে তার প্রায় ৫১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জিডিএফে গ্রাহকের জমা দেয়া অর্থের বেশির ভাগই ব্যবহার করা হয়েছে নিয়ম না মেনে।

সূত্র জানায়, জিডিএফে জমাকৃত অর্থের মধ্যে মোট ৯ হাজার কোটি টাকা এলএনজি আমদানিতে ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে গেছে, যা তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ। বর্তমানে এ তহবিলে জমা রয়েছে ১ হাজার ৩০৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অথগ্যাস উন্নয়ন তহবিল জনগণের অর্থ। ওই অর্থ জ্বালানি বিভাগ জবরদখল করেছে। বিভিন্ন পলিসি পলিসির মাধ্যমে জিডিএফের টাকা নিয়ে নেয়া হয়েছে। যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। দেশে গ্যাসের সরবরাহ সংকট কাটাতে বিগত ২০২২ সালে তীব্র অর্থ সংকটে থাকা পেট্রোবাংলাকে ২ হাজার কোটি টাকা জিডিএফ থেকে ঋণ হিসেবে দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানায় জ্বালানি বিভাগ। পরে অর্থ বিভাগ ওই তহবিল ব্যবহারে সম্মতি দেয়। আর তাতে এখন পর্যন্ত তহবিল থেকে পেট্রোবাংলা মোট ৬ হাজার কোটি টাকা এলএনজি কিনতে ঋণ নিয়েছে। তার আগে দেশে করোনা মহামারীকালে তীব্র অর্থ সংকটে পড়লে দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার আইন করা হয়। আর ওই আইনের আওতায় ২০২১ সালে পেট্রোবাংলা জিডিএফকে নিজের উদ্বৃত্ত তহবিল দেখিয়ে অর্থ বিভাগকে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেয়।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০০৯ সালের ৩০ জুলাইয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের দাম গড়ে ১১ শতাংশের কিছু বেশি হারে বাড়িয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করে, যা ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন দামের একটি অংশ (প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা) গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে জমার আদেশ দেয়া হয়। বর্তমানে দেশের গ্যাস খাতে সাড়ে ৮ টিসিএফের কিছু বেশি মজুদ রয়েছে। বিগত চার বছরে গড়ে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয় গ্যাসের মজুদ কমে গেছে। স্থানীয় গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধিতে পেট্রোবাংলা ৫০টি কূপ খননের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চলতি বছরের মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া ২০২৮ সালের মধ্যেআরো ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব প্রকল্প বাস্তবায়য়ে অর্থের প্রয়োজন। সেজন্য জিডিএফ ব্যবহারের কথা। কিন্তু তহবিল সংকটে ওসব প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান জানান, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও পেট্রোবাংলার আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর ভিত্তি করে চারটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তাছাড়া এলএনজি আমদানিতে জিডিএফ থেকে যে অর্থ পেট্রোবাংলা ঋণ হিসেবে নিয়েছে, ভবিষ্যতে এলএনজি চার্জ বাবদ আদায়কৃত অর্থ সন্তোষজনক অবস্থায় এলে জিডিএফ থেকে নেয়া অর্থ পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকায় এলএনজি কেনা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে উদ্বৃত্ত তহবিলে জমা দেয়ার সুযোগ নেই। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেয়া ৩ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অর্থ বিভাগে দুই দফা চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আইন করে এ টাকা অর্থ বিভাগ নিয়েছে। ফলে তারা ওই অর্থ ফেরত দেবে না। আর এলএনজি কেনার জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা পেট্রোবাংলা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে। ওই অর্থ ফেরত দেয়া হবে। কারণ জিডিএফ ওসব কাজে ব্যবহারের জন্য নয়। গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রমের বাইরে এ টাকা ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings