X

হার্ট ব্লক নিয়ে কিছু কথা

বর্তমান সময়ে প্রায় সবাই জানে হার্ট ব্লক কী? হার্ট যদিও সারা শরীরের পাম্প করার মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করে থাকে। হার্ট একটা থলে বা ব্যাগ, যার ভিতরে রক্ত একদিক দিয়ে প্রবেশ করে এবং চাপের মাধ্যমে অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে রক্তপ্রবাহ সারা জীবন বজায় থাকে বিধায় এর মাধ্যমেই আমরা বেঁচে আছি এবং কাজকর্ম করে যাচ্ছি।

আমরা যখন বিশ্রামে যাই তখন হার্ট সবচেয়ে কম কাজ করে এবং আমরা যখন কঠোর পরিশ্রম করি হার্টও তখন সর্বোচ্চ কাজ করে থাকে। কারণ তাকে কাজের অনুপাতে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হয়। মানে তাকে অনেক শক্তি খরচ করে মানব শরীরকে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহ করতে হয়। চাপের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ ঘটানোর জন্য হার্ট নামক থলেটা মোটা মাংসপেশি দ্বারা তৈরি। থলেটার মাংসপেশি সরাসরি থলের ভিতর থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারে না। তাই তাদের রক্ত গ্রহণের জন্য আলাদা রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা আছে যা বিশেষ কিছু রক্তনালির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসব রক্তনালিকে হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি বলা হয়।

লোহার পানির পাইপ পুরনো হলে বিভিন্ন স্থানে মরিচা জমা হয়ে যেভাবে পানির প্রবাহ কমিয়ে দেয়, ঠিক একই কায়দায় হার্টের রক্তনালি মাঝেমধ্যে বা কোনো এক স্থানে ময়লা-জাতীয় বস্তু জমা হয়ে প্রতিবন্ধকতা বা ব্লকের সৃষ্টি করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে করোনারি আর্টারি ব্লক বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ এটাকে হার্ট ব্লক বলে বুঝে থাকে। কারও হার্ট ব্লক ধরা পড়লে ব্যক্তি এবং পরিবার একটা বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হয়, এটাই স্বাভাবিক।

যার হার্ট ব্লক ধরা পড়েছে তার ব্লক তাৎক্ষণিক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ধরনের ব্লক অনেক বছর আগেই সৃষ্টি হয় এবং তা খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেউ এনজিওগ্রাম করেছেন এবং ব্লক ধরা পড়েছে। যদি এক বছর আগেও তিনি এনজিওগ্রাম করাতেন তবে কাছাকাছি বা একই ধরনের ব্লক ধরা পড়ত। তাই হার্ট ব্লক ধরা পড়লেই বিচলিত না হয়ে ধীরে-সুস্থে সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তাতে আপনার প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।

হার্ট ব্লকের বেশ কয়েক ধরনের চিকিৎসা বর্তমান সময়ে বিদ্যমান আছে। যদি কারও হার্ট ব্লক ৬০% এর কম থাকে সেই ব্লককে নন সিগনিফিকেন্ট ব্লক বলা হয়। এ ধরনের রোগীদের (নন ইনভেসিভ পদ্ধতি) মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবন ধারা পবির্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। যাদের ব্লক শতকরা ৬০% বা তার অধিক তাদের চিকিৎসা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে তাৎপর্যপূর্ণ (শতকরা ৬০% বা তার অধিক ব্লক মানে ৬০% থেকে ১০০%) ব্লকের চিকিৎসা হিসাবে তিন ধরনের চিকিৎসা বিদ্যমান আছে।

যেমন- রিং পরা, বাইপাস অপারেশন এবং ইসিপি মেশিনের মাধ্যমে ন্যাচারাল বাইপাস চিকিৎসা গ্রহণ করা। এখানে রিং এবং বাইপাস পদ্ধতি কাটা-ছেঁড়া বা অপরেশনের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু ইসিপি থেরাপির মাধ্যমে ন্যাচারাল বাইপাস চিকিৎসায় কোনোরূপ কাটা-ছেঁড়া বা অপারেশনের প্রয়োজন হয় না এবং এটি বেশ কার্যকরী ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত। তবে কেউ প্রয়োজন হলে বার বার রিং পরতে পারবেন। রিং পরে পরবর্তীতে প্রয়োজনে বাইপাস বা ন্যাচারাল বাইপাস করতে পারবেন। অনুরূপভাবে কেউ ন্যাচারাল বাইপাস চিকিৎসা নেওয়ার পর প্রয়োজন হলে রিং অথবা বাইপাস অপারেশন অথবা আবারও ন্যাচারাল বাইপাস চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন এতে কোনো অসুবিধা হবে না।

হার্ট ব্লক এমন একটি অসুস্থতা যা একবার দেখা দিলে তা বার বার হতে থাকে। ফলে কোনো না কোনো সময়ে আবার ব্লক দেখা দেয় (চিকিৎসা গ্রহণের পরেও) এবং অনেক সময়ই বারবার চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই মধ্য বয়স থেকেই খাওয়া-দাওয়া ও শারীরিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখুন। এতে আপনার শারীরিক যোগ্যতা (ফিটনেস) বজায় থাকলে হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস ও হার্ট ব্লক থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings