X

হুমকিতে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য

সুন্দরবনের সীমানা ঘেঁষে থাকা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ছে ‘ওয়ান টাইম’ প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার। বাজার থেকে গ্রাম সবখানেই মিলছে একবার ব্যবহারযোগ্য গ্লাস, প্লেট, চামচ ও বক্স। ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ে। জোয়ার-ভাটার কারণে তা ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের নদী ও খালে। পরিবেশবিদরা বলছেন, অপচনশীল এসব প্লাস্টিক সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা ও প্রাণীকুল।

যেসব প্লাস্টিক পণ্য একবার ব্যবহারের পর আর কোনো কাজে লাগে না, সেগুলোই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (ওয়ান টাইম প্লাস্টিক) হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় জলবায়ু কর্মীরা জানান, দেশের উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্যের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

সম্প্রতি সরেজমিনে সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, হরিনগর, নীলডুমুর, রমজাননগর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাশের নদীতে ভাসছে নানা রকম প্লাস্টিক পণ্য ও পলিথিন। দেখা মিলেছে খাবারের প্লেট, পানির বোতল, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেটসহ আরও অনেক বর্জ্যের।

স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকায় যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, বনভোজন এবং দোকানে খাবার ও পানীয় পরিবেশন করতে প্লাস্টিক ব্যবহারের আশঙ্কাজনকভাবে প্রবণতা বেড়েছে। নদী ও সুন্দরবন থেকে ধরা মাছের পেটেও মিলছে প্লাস্টিক। অনেক মাছ, কচ্ছপ প্লাস্টিকে আটকে মারা যাচ্ছে। বনের ফাঁকা জায়গায় গাছপালা গজানোর হারও কমেছে।

গত ২০ বছর ধরে সুন্দরবনসংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীতে নিয়মিত মাছের পোনা ধরেন জহুরা বিবি। তিনি বলেন, ‘জালে মাছের পরিবর্তে পলিথিন উঠে আসে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও এমন ছিল না। লোকালয়ে এখন পলিথিন ব্যবহার বেড়েছে। ব্যবহার শেষে তারা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যেখানে সেখানে ফেলে দেন। সেগুলোই পরে নদীতে এসে পড়ে।’

নীলডুমুর বাজারের ব্যবসায়ী আল-আমিন হোসেন জানান, এখন মানুষ প্রায় সব কাজে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার করে। সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা এখন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লেট, চামচ ও বক্স ব্যবহার করেন। ব্যবহার শেষে নদীতেই ফেলা হয় এসব প্লাস্টিক। এ ছাড়া প্রতিদিনের পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-পলিথিন ঝাড়ু দিয়ে নদীতে ফেলা দেওয়া হয়।’

নীলডুমুর বাজারের সুন্দরবনের মাছ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী শরিফ হোসেন। তিনি জানান, তিনি কাইন ও ভোলা মাছের পেটের মধ্যে পলিথিন পেয়েছেন। জেলেদের পলিথিনে জড়িয়ে মৃত কচ্ছপ নিয়ে ফিরতে দেখেছেন।

জলবায়ু কর্মী শাহিন আলম বলেন, স্থানীয় নদ-নদী দিয়ে প্লাস্টিক সুন্দরবনে ঢুকে যাচ্ছে। বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, হরিনগর, রমজাননগর, আটুলিয়া, গাবুরা- এসব এলাকার প্লাস্টিক যাচ্ছে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনকুড়ি নদী হয়ে সুন্দরবনে। এ হুমকি ঠেকাতে ‘ওয়ান টাইম’ পণ্যের বিকল্প দরকার।

বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার এবিএম হাবিবুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার সময় নদীতে প্লাস্টিকের পণ্য না ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ট্রলারে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও অনেক পর্যটক নদীতে প্লাস্টিক ফেলেন। পাশের লোকালয় থেকেও সুন্দরবনে প্রচুর বর্জ্য চলে আসে।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, ওয়ান টাইম পণ্যে গরম খাবার পরিবেশন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব পণ্যে রাখা গরম খাবার ও পানীয় খেরে হৃদরোগ, রক্তনালির অসুখ, নারীদের ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যানসার এবং পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন জানান, সুন্দরবনের দুষণমুক্ত রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চলছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক-পলিথিন না ফেলতে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

Md Abu Bakar Siddique:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings