লাল টুপি পরা পাখিটিকে খুঁজছি দীর্ঘদিন। ওর সন্ধানে ছয়জনের দলে ২০১৯ সালের মার্চে গিয়েছিলাম কক্সবাজারের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানে। জলপ্রপাতের খানিকটা আগে গাড়ি থেকে নেমে দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে ওপরে উঠছিলাম। অর্ধেক পথ পেরোতেই সহকর্মী অধ্যাপক তৈমুর ইসলাম আচমকা বলে উঠল, ‘স্যার, ভয় লাগছে, আর উঠতে পারব না।’ আমি বললাম, ‘যেখানে উঠেছ, সেখান থেকে নামাও সহজ হবে না।’ এমন সময় লুঙ্গি পরা ১০-১২ বছরের এক কিশোরকে মাথায় বোঝা নিয়ে পাহাড়ে উঠতে দেখলাম। ওকে দেখিয়ে বললাম, ‘ছোট্ট ছেলেটি মাথায় বোঝা নিয়ে যদি উঠতে পারে, তুমি পারবে না কেন?’
উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গল্প করতে করতে একসময় জায়গায়মতো পৌঁছে গেলাম। অতি চমৎকার জায়গা, চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। দুই ঘণ্টায় ১২ প্রজাতির পাখির ছবি তুললাম। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লাল টুপির পাখিটি অধরাই রয়ে গেল। চার বছর পর চট্টগ্রামের অনন্যা আবাসিক এলাকায় পাখিটিকে দেখার তথ্য জেনে ওর সন্ধানে গেলাম। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও দেখা পেলাম না। এ বছর জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) চতুর্থ বর্ষের প্রাণিচিকিৎসার ছাত্রদের বন্য প্রাণী চিকিৎসা বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এক সকালে সাবেক ছাত্র ডা. সাদ্দাম হোসেন ও সিভাসুর অধ্যাপক জুনায়েদ সিদ্দিকীসহ অনন্যায় গেলাম। এটি একটি আবাসিক এলাকা। কিন্তু ওখানকার হোগলাবন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাখিটির দেখা পেলাম না।
পরদিন আরেক ছাত্র ইফতেখার আহমেদকে নিয়ে সকাল পৌনে ৯টায় অনন্যায় পৌঁছালাম। ওকে বললাম, ‘দেখো, কীভাবে পাখিটিকে হোগলাবন থেকে বের করে আনি?’ আমার মুঠোফোনটি ওর হাতে দিয়ে পাখিটির রেকর্ড করা ডাক বাজাতে বললাম। আর আমি ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে অপেক্ষায় রইলাম। ৮টা ৫৫ মিনিটে ডাক বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে হোগলাবনে পাখিটির লাফালাফি শুরু হয়ে গেল। মাত্র ১ সেকেন্ড, এরপর উধাও। দুটি ক্লিক, ছবি ভালো হলো না। দুই মিনিট পর আবারও ডাক বাজালাম। রাস্তার দুই ধারে হোগলাবন। বাঁ পাশের বন থেকে পাখিটি বেরিয়ে ডান পাশের বনে ঢুকল। প্রস্তুতি নিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। দুরন্ত পাখিটির অস্থিরতা কিছুটা কমল। এবার সে হোগলাপাতার ওপর বসল। আমিও সমানে শাটার চেপে গেলাম। ওর ১ মিনিট অবস্থানকালে ৪৬টি ছবি তুললাম।