X

৫ শতাংশ কর আরোপ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমবে রেমিট্যান্স

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের পরিকল্পনা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন দেশটি রেমিট্যান্স আহরণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে যায়, তা নিয়ে শঙ্কিত ব্যাংকাররা।
হাউস বাজেট কমিটিতে অনুমোদিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে এই কর আরোপের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে অভিবাসী, এমনকি গ্রিনকার্ড ও এইচ-১বি ভিসাধারীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও কর কাটা হবে। কর আরোপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম অর্থের কোনো ছাড় থাকছে না, অর্থাৎ যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালেই ৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের জন্য এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৯৪ কোটি পাঁচ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ কর কার্যকর থাকলে এই সময়ে প্রায় ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার মতো রেমিট্যান্স যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যেত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স কমে যাবে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তেমন কোনো প্রভাবই পড়বে না।

যদিও মার্কিন অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সও অ্যাগ্রিগেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন : ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব হিসেবে দেখানো হয়। ফলে বাস্তবে যে রেমিট্যান্স যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখন প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসছে। এর ওপর যদি ৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, তাহলে প্রতি মাসেই প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাবে, যা বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক।

তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত অ্যাগ্রিগেটরদের সঙ্গে বসে রেমিট্যান্সের উৎস নির্ধারণ এবং পরিসংখ্যান সঠিক করা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন করের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ কোটি অভিবাসী প্রভাবিত হবেন। করটি কার্যকর হলে তাঁরা আর্থিক চাপে পড়বেন, ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো নিরুৎসাহ হতে পারে।

মাইগ্রেশন ও রেমিট্যান্স বিষয়ক বিশ্লেষক এবং ইন্টার-আমেরিকান ডায়ালগের গবেষক ম্যানুয়েল ওরোজকো বলেছেন, ‘এই কর আরোপে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যক্তিগত খরচে পতন দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া এটি রেমিট্যান্স ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। সেই সঙ্গে অভিবাসীদের জন্য এটি বাড়তি আর্থিক চাপ হয়ে দাঁড়াবে। গভীর উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই করের ফলে অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) অর্থ প্রেরণ পদ্ধতির পুনরুত্থান ঘটতে পারে। ২০০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩০ শতাংশ ছিল অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে। কিন্তু প্রতিযোগিতা এবং প্রেরণ ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে গত দুই দশকে তা কমে ২ শতাংশে নেমে এসেছে।’

এর আগে ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণাও দেন, যা বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেন। যদিও এটি আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে রেমিট্যান্স কর কার্যকর হলে তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স অন্যতম প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস হওয়ায় ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর আরোপ নিঃসন্দেহে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

firoz:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings