বাংলাদেশে কাজ করা প্রায় ৬ লাখ বিদেশি নাগরিক এখনো কোনো ধরনের নিবন্ধনের আওতায় নেই। তাদের বৈধভাবে করজালে আনা গেলে বছরে অন্তত ১৮ হাজার কোটি টাকা (প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার) রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এই বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতছাড়া হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাটি। তাতে অর্থ পাচার রোধে স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধন, অনিবন্ধিত ই-কমার্স ও কুরিয়ার সার্ভিসের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, কর ফাঁকি রোধে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং খেলাপি ঋণ মোকাবেলায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদেশ থেকে আসা স্বর্ণের বার ও অলঙ্কার আমদানিতে প্রচলিত নীতিমালার ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। এজন্য করমুক্ত স্বর্ণ আনার সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৭৫ গ্রামে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই যাত্রীর বছরে একাধিকবার ব্যাগেজ রুল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা এবং বড় অঙ্কের নগদ উত্তোলনে উৎসে কর আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সংস্থাটি মনে করছে, দেশে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, ঋণখেলাপি, এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার মধ্য দিয়ে অর্থনীতি এক কঠিন সময় পার করছে। ফলে বাজেট বাস্তবমুখী ও স্বচ্ছ হতে হবে। একইসঙ্গে কর ব্যবস্থায় সংস্কার এনে রাজস্ব আহরণে জোর দিতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও দুর্নীতির কারণেও বাজেটের অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এর সমাধানে প্রকল্প নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ জোরদার, বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্পে সচেতনতা, এবং পিপিপি মডেলে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই প্রতিবেদনকে ঘিরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট পরিকল্পনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে বলে জানা গেছে।