X

মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান তুলে না ধরায় পিছিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম

মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান যথাযথভাবে শিক্ষা বা সমাজে তুলে না ধরার কারণে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞান ও জ্ঞানচর্চায় আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়েছি। তবে আমরা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইবনে আল-হাইসাম সায়েন্স ফেস্ট ২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। বিজ্ঞানচর্চার অনুপ্রেরণা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে ইসলামী ছাত্রশিবির এ সায়েন্স ফেস্টের আয়োজন করে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার প্রদর্শনী এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এ উৎসব সন্ধ্যা ৬টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের যে উৎকর্ষ আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি, তার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন মুসলিম বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান ছিল মুসলমানদের নিজস্ব সম্পদ কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই সম্পদ আজ বেহাত হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইবনে আল-হাইসাম, আল-জাবির ইবনে হাইয়ান, আল-বেরুনী, ইবনে সিনা প্রমুখ মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান যথাযথভাবে শিক্ষা বা সমাজে তুলে না ধরার কারণে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞান ও জ্ঞানচর্চায় আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়েছি।

আমরা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের চোখে-মুখে যে স্বপ্নের ছাপ আমরা দেখতে পাই, তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ প্রজন্ম একদিন জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুর রহমান। সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মীর্যা গালিব, যুক্তরাষ্ট্রের নক্সভিল টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের হোসেন, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সদস্যরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান সম্পাদক ডা. নাঈম তাজওয়ার।

সমাপনী ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ইসলামিক ছাত্র সংগঠন ইফসুর সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা ফয়সাল পারভেস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ প্রধানসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মেধা এবং সৃজনশীলতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আজকের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আগামী দিনের নেতৃত্বে থাকবে এবং বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।

অতিথিরা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা দেখে অভিভূত হন এবং শিবিরের বিজ্ঞানচর্চার প্রতি প্রশংসা জানান। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ অর্জনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ জরুরি, যাতে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী উদ্যোগে উৎসাহ প্রদান করা যায়।

দিনব্যাপী আয়োজনে প্রতিযোগীদের প্রজেক্ট প্রদর্শনী, রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন বিষয়ের বুথ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী প্রজেক্টগুলো অভিভূত করে বিচারক প্যানেলসহ উপস্থিত সবাইকে। বিভিন্ন স্কুলকলেজ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ হাতে তৈরি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে দেখিয়েছে যে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে কীভাবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়।

সায়েন্স ফেস্ট ২০২৪-এ জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হান্ট-প্রজেক্ট শোতে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার হিসেবে ৬০ হাজার টাকা, রানার-আপ ৪০ হাজার টাকা, তৃতীয় স্থান ৩০ হাজার টাকা, চতুর্থ স্থান ২০ হাজার টাকা এবং পঞ্চম স্থান ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, রানার-আপ ১০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান হয়। এ ছাড়াও ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট প্রদান হয়।

রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতার ১ম স্থান অর্জন করেন মুনতাজিম বিল্লাহ, যিনি ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তার স্কোর ছিল ৭.৭১৬। ২য় স্থানে রয়েছেন অবিরুপ দাস, যিনি চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণ করেন এবং তার স্কোর ৮.৬০৪। ৩য় স্থানে রয়েছেন ফারহান তানভীর ফাহিম, যিনি মিরপুর, ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেন এবং তার স্কোর ৮.৯১৬।

জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হান্ট-প্রজেক্ট শোতে ১ম স্থান অধিকার করেছেন সেন্ট জোসেফ কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘প্লাজমা রাইডার।’ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ পাবলিক কলেজ টিম ‘এরোনার্ড’। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের টিম ‘স্মার্ট এজ’, চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘আটলান্টিস এক্সপ্লোরার’ এবং ৫ম স্থান অধিকার করেছে সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীদের টিম ‘হাই ফ্লাইয়ারস’।

উল্লেখ্য, জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হান্ট প্রোজেক্ট শোতে মোট ৩৪০টি টিম এবং রবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় প্রায় ৯০০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছেন।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings