X

বিসিবিতে নতুন রোগ হিসেবে উদ্ভব হয়েছে ‘দুর্ব্যবহার’

নাজমুল হাসান পাপন জমানায় ক্রিকেটের চেয়ে বাইরের কর্মকাণ্ডে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি। গত ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বেও বদল এসেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে মনোনীত হয়ে একই সঙ্গে বিসিবি পরিচালক হয়েছেন ফারুক আহমেদ এবং নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরিচালক হওয়ার দিনেই পাপনের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে সভাপতির চেয়ারে বসেন ফারুক।

নতুন নেতৃত্বে দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনটা আকাঙ্ক্ষিতই ছিল। ফারুক-ফাহিমদের তরফেও বারবার দিন বদলের আশ্বাসের বানী শোনা যাচ্ছিল। নতুন বিসিবির ঘরের মাটিতে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আয়োজন। শুরুতেই যেন মুখ থুবড়ে পড়ল তারা। টিকিট নিয়ে ভোগান্তি, নানা অব্যবস্থাপনায় দিন বদলের বাংলাদেশের বিপিএলে কালিমা লেপে দিয়েছে যেন। এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে নেতৃত্বস্থানীয়দের অর্ন্তঃকলহের বিষয়টি।

একটু পেছনে ফেরা যাক। গত ৩০ আগস্ট বিপিএলের উদ্বোধনী দিনের খেলা শুরুর আগমুহূর্তে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাইরে টিকিট নিয়ে কম হাঙ্গামা হয়নি। টিকিটপ্রত্যাশী বিক্ষুব্ধ দর্শকরা স্টেডিয়ামের ফটকেও ভাঙচুর চালান। একই দিনে প্রেসিডেন্ট বক্সে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সচিব (কাগজে-কলমে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা) মাহফুজ আলম ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাহফুজ আলম।

তবে কিছু একটা যে হয়েছে সেটির আভাস দিয়েছেন খোদ বিসিবি সভাপতি। গতকাল (রোববার) সিলেটে মাঠ পরিদর্শন করতে গিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সেদিন ওপেনিং সিরিমনি (বিপিএলের) ছিল, উপদেষ্টা মহোদয় আসতে পারেননি, টিকিটের চাপ ছিল। সব মিলে দিনটা আমার জন্য ভালো ছিল না। আপনারা জানেন প্রেসিডেন্ট বক্সেও একটা ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করিনি, এখনো করছি না। তবে ঘটেছিল।’ আরও যোগ করেন, ‘তখন কার সঙ্গে কী বলেছি, হয়তো আমার মনেও নেই। তবে একটা প্রতিষ্ঠানে মতের অমিল হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এখানে দোষের কিছু দেখি না। এগুলো যখন আগে প্রেসে চলে আসে, তখন দোষের। এগুলো আগে নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।’

বিসিবি সভাপতির সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির ‘ঝামেলার’ রেশ কাটতে না কাটতেই রীতিমতো বোমা ফাটালেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পাপন জমানার পর নতুন করে এখনো বিসিবির স্থায়ী কমিটিগুলোর দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। অলিখিতভাবে বিসিবি চালাচ্ছেন মূলত দুজন- ফারুক এবং নাজমুল আবেদীন ফাহিম। একসঙ্গে বোর্ডের দায়িত্বে আসায় দুজনের সম্পর্কটা ভালো থাকাটাই ছিল প্রত্যাশিত, উল্টো দুজনের সম্পর্কে ফাটলের খবর সামনে এলো। বিসিবি সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন ফাহিম।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, কোনো একটি বিষয়ে ফাহিমকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘ইউ এক্টিং লাইক ফানি? বিসিবি প্রেসিডেন্ট হতে চান? আসেন বানায় দেই।’ যদিও বোর্ড সভাপতি ঠিক এমন মন্তব্য করেছিলেন কি না সেটি এড়িয়ে গেছেন ফাহিম। রোববার প্রচারিত দেশের বেসরকারি টেলিভিশন যমুনাতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাহিম বলেছেন, ‘বিসিবি সভাপতির সেই মন্তব্য আমি পুনরায় বলতে চাই না। তবে সেটি আমাকে খুবই আশাহত করেছে। আমি জানি না কেন তিনি এতগুলো মানুষের সামনে এমন মন্তব্য করলেন। পরিচালকদের যে জায়গা দেওয়া দরকার, সেটি কতটা বিসিবি প্রেসিডেন্ট দিতে চান, তা স্পষ্ট নয়। আমার কথা কিছুটা ভিন্ন হতে পারতো। কারণ, আমরা দুজনই নতুন এসেছি। সেখানে আমাদের মধ্যে একসাথে কাজ করার যে ব্যাপারটা, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য সমীচীন নয়।’

মিডিয়াতে হুটহাট বেতাল কথাবার্তার জন্য বেশ সমালোচিত ছিলেন বিদায়ী সভাপতি পাপন। এ ছাড়া বিসিবির সব বিভাগেই তিনি হস্তক্ষেপ করতেন বলে অভিযোগ আছে। পরিচালকদেরও তেমন একটা গুরুত্ব ছিল না তার বোর্ডে। ফারুকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ- তিনি স্বাধীনভাবে কাজ না করতে দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিসিবি ছাড়ার আভাসও দিয়ে রাখলেন ফাহিম। এভাবে চলতে থাকলে তিনি দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেবেন, ‘আমার অনেক সময় মনে হয় বোর্ডের বাইরে থাকতে পারলেই মনে হয় ভালো হবে। কারণ, আমি বোর্ডের বাইরে থেকে যে ভূমিকা রাখতে পারি বা যে আলাপ-আলোচনা করতে পারি, সেটি এখানে থেকে করা সম্ভব নয়। যদি বোর্ডে থাকি তাহলে আমাকে কাজ করতে দিতে হবে। কাজ না করতে পারলে তার চেয়ে বাইরে থাকাই ভালো।’

ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির সঙ্গে বিসিবি সভাপতির ‘ঝামেলার’ রেশ কাটতে না কাটতেই রীতিমতো বোমা ফাটালেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পাপন জমানার পর নতুন করে এখনো বোর্ডের স্থায়ী কমিটিগুলোর দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। অলিখিতভাবে বিসিবি চালাচ্ছেন মূলত দুজন- ফারুক এবং নাজমুল আবেদীন ফাহিম। একসঙ্গে বোর্ডের দায়িত্বে আসায় দুজনের সম্পর্কটা ভালো থাকাটাই ছিল প্রত্যাশিত, উল্টো দুজনের সম্পর্কে ফাটলের খবর সামনে এলো।
সিলেট পর্বের বিপিএল শুরুর আগে ফারুক ও ফাহিম ইস্যু দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ঝড় তুলেছিল। এর মধ্যেই দুজনকেই দেখা গেছে সিলেটে। ফাহিমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘দুর্ব্যবহার এটা তো আসলে একটা আপেক্ষিক টার্ম। আপনাকে একটা ঘুষি মারলে দুর্ব্যবহার, ছোট্ট একটা কথা বললেও দুর্ব্যবহার। কথাটা আসলে জোরে বলেছি! এরকম কোন কথা বলেছি যেটা উনি পছন্দ করেননি। অনেক সময় অনেক জিনিস কথা বলে ঠিক করে ফেলা যায়।’

বিষয়টা সমাধান হয়েছে বলে দাবি করে ফারুক আরও বলেন, ‘ফাহিম ভাই আমার বয়োজ্যেষ্ঠ, সিনিয়র মানুষ। আমারও সিনিয়র প্লেয়ার। মানে, অনেক সিনিয়র। সেদিক বিবেচনা করে উনি হয়ত মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। এখন ফাহিম ভাই আজকে আর কোনো কথা বলতে চাননি। আমার পাশেই ছিলেন। আমরা বিষয়টি সমাধান করেছি, মোট কথা।’

স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতির মন্তব্য, ‘পদত্যাগ করতে চাননি (ফাহিম), কাজ করা কঠিন বলেছেন। পদত্যাগ করতে চেয়েছে এমনটা আমি শুনিনি, যাইহোক ফাহিম ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। এই বোর্ড বলতে কিন্তু ফাহিম ভাই আর আমাকে বোঝায়। আর যারা আছে তারা কিন্তু সবাই পুরাতন। কাজের মাত্রা বেশি লোক সংখ্যা কম। তখন অনেক দিকে নজর দিতে হয়। তো সেখানে ভুল বুঝে একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে। ওই জিনিস থেকেই হয়তো চিন্তা করছেন কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না।’

শোনা যাচ্ছে, বিসিবির স্থায়ী কমিটিগুলোর একটা খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। যেটা নিয়ে বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ এই দুজনের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। বিপিএলে কোচের দায়িত্বে থাকা সাবেক এই বিসিবির পরিচালক ফাহিমের দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, ‘ফাহিম ভাই অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। উনি অনেক সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করছিলেন, দেখছেন অনেক কিছু চিন্তা করছেন। এখন এগুলো তো দেখতেছি আমি একটা লোভ লালসার মত হয়ে যাচ্ছে। (ক্রিকেট) অপারেশন্স না পেলে কাজ করবো না, পদত্যাগ করবো লোভ লালসা জাস্ট আমার মনে হয়।’

অভিযোগ অনুযোগ থাকলেও সিলেটে আবার দুই জন একসঙ্গে আছেন। গতকাল ফাহিমকে পাশে রেখেই মিডিয়ায় নিজের ওপর আনীত অভিযোগ খন্ডাচ্ছিলেন বিসিবি সভাপতি। আজও দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে। সিলেট স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে ফারুক আহমেদের পাশে বসে খেলা উপভোগ করতে দেখা গেছে নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। অথচ কে বলবে একদিন আগেই এত কিছু হয়ে গেছে!!

সে যাই হোক, দুই জনই যেহেতু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টারই বিসিবি থেকে দুর্ব্যবহার রোগের ওষুধ প্রয়োগ করতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

Main Admin:
X

Headline

You can control the ways in which we improve and personalize your experience. Please choose whether you wish to allow the following:

Privacy Settings