সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল সরব হলেও, এবারের আন্দোলনের মাত্রা বিগত সময়েরগুলো ছাড়িয়ে গেছে। দ্রুত এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এখন আলোচনায় রয়েছে কোটা পদ্ধতি সংস্কার হবে, বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে? এ প্রশ্নের জবাব জানার অপেক্ষায় দেশের মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিশ্চয় সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতও গুরুত্ব দেবেন। সেই সঙ্গে নীতিনির্ধারক যারা আছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখবেন, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে এবং সবার কাছে বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
আবার কেন কোটা আন্দোলনশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।
ওই পরিপত্রের আগে পদগুলোতে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০, নারী কোটা ১০, জেলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ ও প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ কোটা বহাল ছিল।
এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ বাতিল চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। তখন রুল জারির পর ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে কোটা বহাল রাখার আদেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রপক্ষ’ আবেদন করলে গত ৪ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নিয়মিত আপিল করতে বলেন। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল থাকে।
এরপর আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানান। শুরুতে মিছিল, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দিলেও সম্প্রতি শুরু হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক।
এদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীর করা আবেদন ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটো পৃথক আবেদন শুনানি নিয়ে গত ১০ জুলাই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ওই পরিপত্রের ওপর স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করে আদেশ দেন। এ বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ