পত্রিকার পাতা
ঢাকাশনিবার , ২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কর্পোরেট
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  8. খেলাধুলা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. ধর্ম
  14. পর্যটন
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সব খবর

রাজশাহীর টি-বাঁধ: পদ্মাপাড়ের প্রাকৃতিক রত্ন

Md Abu Bakar Siddique
মে ১২, ২০২৫ ৫:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পদ্মার ঢেউ আর সন্ধ্যার রঙে রাজশাহী শহরের যে স্থানটি এক আলাদা ব্যঞ্জনায় ফুটে ওঠে, তা হলো ‘টি-বাঁধ’। রাজশাহী শহরের পশ্চিমপ্রান্তে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই বাঁধটি এখন আর শুধুই একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প নয়; এটি হয়ে উঠেছে নগরবাসীর বিনোদন, প্রশান্তি ও পরিচয়ের এক অনন্য প্রতীক।

নাম ‘টি-বাঁধ’ কেন?
বাঁধটির গঠন ইংরেজি অক্ষর ‘T’-এর মতো। একটি সোজা বাঁধ পদ্মা নদীর পাড় বরাবর বিস্তৃত, আর একটি শাখা নদীর ভেতর দিকে ঢুকে গিয়ে গঠন করেছে ‘টি’ আকৃতি। এ আকৃতিগত কারণেই স্থানীয়রা একে ‘টি-বাঁধ’ বলে ডাকে। শহর রক্ষায় বাঁধটির কার্যকারিতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে মানুষের আবেগের জায়গা।

প্রতিরক্ষা থেকে পর্যটনে রূপান্তর
মূলত নদীভাঙন প্রতিরোধের জন্য টি-বাঁধ নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু কালের প্রবাহে এটি রাজশাহীর অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বিকেল হলেই এখানে জড়ো হন শত শত মানুষ- কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ প্রেমিককে নিয়ে, কেউবা একান্তে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাতে। সন্ধ্যার সময় সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে, তখন পদ্মার জলে তার প্রতিবিম্ব এক অপরূপ দৃশ্য রচনা করে। নদীর ওপারে চর, নৌকা চলাচল আর ঠাণ্ডা হাওয়া- সব মিলিয়ে এক স্বর্গীয় আবহ তৈরি হয়।

অভিজ্ঞতার মঞ্চ
রাজশাহীবাসীর কাছে টি-বাঁধ কেবল একটি জায়গা নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতার মঞ্চ। এখানে দাঁড়িয়ে শহরের কোলাহল ভুলে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগ মেলে। হাঁটাচলা, গল্পগুজব, আড্ডা কিংবা চুপচাপ বসে থাকা- সবই যেন এখানে এসে অন্যরকম অর্থ পায়। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরমুড়ি দিয়ে পদ্মার পাড় যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

ছবির শহরে ছবি তোলার স্বর্গ
রাজশাহী শহর পরিচিত তার পরিপাটি রাস্তা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং বৃক্ষরাজির জন্য। টি-বাঁধ এই পরিচ্ছন্নতার ধারায় যুক্ত করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা। তাই ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি স্বর্গতুল্য- সূর্যাস্ত, নদী, চর, মানুষ আর আলো-আঁধারির সংমিশ্রণে পাওয়া যায় এক অসাধারণ ক্যানভাস।

চলছে উন্নয়ন, বাড়ছে সম্ভাবনা
রাজশাহী সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে টি-বাঁধকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বসার জায়গা, পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার, আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের মতো নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। এ ছাড়া নদীর পাড়ঘেঁষে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল ট্র্যাক নির্মাণের কথাও ভাবা হচ্ছে।
রাজশাহীর টি-বাঁধ এখন শুধু একটি বাঁধ নয়, এটি একটি গন্তব্য, একটি অনুভূতি, একটি পরিচয়। যারা এখনো পদ্মার পাড়ে এই নিরিবিলি সৌন্দর্য উপভোগ করেননি, তাদের জন্য টি-বাঁধ একবার হলেও ঘুরে দেখার মতো স্থান। নগরজীবনের ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির কাছে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক উপযুক্ত স্থান এই টি-বাঁধ।

যেভাবে রাজশাহী যেতে হবে
ট্রেনে রাজশাহী ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন রাজশাহী যায়। এর মধ্যে বনলতা এক্সপ্রেস: আন্তনগর, নন-স্টপ ঢাকা থেকে সরাসরি রাজশাহী যায়। কমলাপুর থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে যায়। পদ্মা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ১১টায়। রাজশাহীতে পৌঁছায় ভোরে। এ ছাড়া দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। ভাড়া শোভন চেয়ার ৩৪০ টাকা, এসি ৬১৫ টাকা এবং এসি স্নিগ্ধা/ক্যাবিন ৯০০–১২০০ টাকা।
বাসে ভ্রমণ সুলভ ও সহজলভ্য। ঢাকা থেকে এনবিএস, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী, গ্রিন লাইন পরিবহনের বাস গাবতলী, কল্যাণপুর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যায়। ভাড়া নন-এসি ৫০০–৬৫০ টাকা আর এসি ৯০০–১২০০ টাকা। স্লিপার কোচ ১৪০০–১৬০০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা (রাস্তার অবস্থান ও সময়ভেদে ভিন্ন হতে পারে)।
অন্যদিকে বিমানে মাত্র ৪৫ মিনিটে রাজশাহী পৌঁছানো যায়। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ১–৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৬,৫০০ টাকা (সিজন ও বুকিং টাইম অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)।

কোথায় থাকবেন
রাজশাহী ভ্রমণে গেলে থাকার জন্য আপনি নানা ধরনের অপশন পাবেন। স্বল্প বাজেটের হোটেল থেকে শুরু করে তিন তারকা মানের হোটেল পর্যন্ত। রুম ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে হবে। এসব হোটেলে থাকার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন পরিচিত বা রেটিং ভালো হোটেল নির্বাচন করুন। রুম নেওয়ার আগে দেখে নিন নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও লোকেশন। রুম ভাড়া নিয়ে আগে আলোচনা নিশ্চিত করুন।

রাজশাহীর আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
রাজশাহীর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহিদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান (ভিক্টোরিয়া পার্ক), পুঠিয়া রাজবাড়ি, বড়কুয়া শিবমন্দির, বাঘা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, জাহাজঘাট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গোদাগাড়ী চর এলাকা, শাহ মখদুম মাজার, তানোর রাজবাড়ি, রাজশাহী সেনানিবাস, সাগরপাড়া মসজিদ, মধুকৃষ্ণ মন্দির, রাজশাহী জেলার সুলতানপুর, মুসুন্দি দিঘি, শিরোইল মাজার, হযরত শাহ মখদুমের মাজার, ভেড়ী বিল ইত্যাদি।

টি-বাঁধ ভ্রমণের সময় করণীয় সতর্কতা
রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত টি-বাঁধ (T-Bandh) ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি, যা নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। প্রথমত, নদীর ধারে চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঁধের কিছু জায়গা পিচ্ছিল এবং ঢালু হতে পারে, বিশেষ করে বর্ষাকালে। তাই শিশু বা বয়স্কদের নিয়ে গেলে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, সাঁতার না জানলে নদীর পানির ধারে বেশি ঘেঁষবেন না। পদ্মা নদী দেখতে শান্ত মনে হলেও এর স্রোত প্রবল হতে পারে। অনেকে ছবি তুলতে গিয়ে অসতর্কভাবে পানির অনেক কাছে চলে যান, যা বিপজ্জনক। তৃতীয়ত, সন্ধ্যার পর জায়গাটি অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে গভীর রাতে একা থাকা বা অপরিচিত কারও সঙ্গে ঘোরাফেরা এড়ানো উচিত। পারিবারিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে দিনের আলো থাকতে ঘোরাফেরা শেষ করাই শ্রেয়।
চতুর্থত, যদি যানবাহন নিজস্ব হয়, তাহলে পার্কিংয়ের সময় নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখুন এবং লক করে রাখুন। হকার বা পথচারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলুন, তবে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করাই ভালো।
সবচেয়ে বড় কথা, পরিবেশ রক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। প্লাস্টিক বা ময়লা নদীর ধারে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। নিজের ও প্রকৃতির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই রাজশাহীর এই মনোরম টি-বাঁধ উপভোগ করুন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।