২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ইসরায়েল। সে যুদ্ধের দামামা এখনো জ্বলছে। এরই মধ্যে ইরানে হামলা শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে। ইরানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে দেশটির পারমাণবিক প্রকল্প, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে ৭৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। ইরানে হামলার পরপরই ‘পাল্টা হামলার শঙ্কায়’ নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েলি সরকার। এর আগে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা দেখা গেলেও ইরানের মাটিতে এমন সরাসরি সামরিক অভিযান ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর এবারই প্রথম ঘটল। গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি নৃশংস হত্যাযজ্ঞে উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা অনেক আগেই টালমাটাল হয়ে পড়েছে। যদিও ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ রবিবার ওমানের মাসকটে দেশ দুটির মধ্যে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিক এই অবস্থার মধ্যে হামলা চালাল ইসরায়েল। ইরানে ইসরায়েলি হামলার নেপথ্যের যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে কি না, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে যা লিখেছেন, তাতে কার্যত স্পষ্ট, ইসরায়েলি হামলার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ‘মদদ’ রয়েছে।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোহাম্মদ এসলামি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা ইরানি কূটনীতিকদের সঙ্গে আমেরিকানদের মধ্যে চলমান ছিল। বর্তমানে ইরানের পক্ষ থেকে আলোচনায় ফেরার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কারণ ইরান মনে করে, এই হামলা আমেরিকার সহায়তায় সংঘটিত হয়েছে।
ইরানে হামলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য একটি করুণ পরিণতির পথ তৈরি করেছে। যার ফলাফল তারা নিশ্চিতভাবেই ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন এক বিশ্লেষণে বলেছে, ইরান হামলার প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এরই মধ্যে তারা ইসরায়েলকে লক্ষ করে ১০০টির মতো ড্রোন ছুড়েছে। সেসব ড্রোন ভূপাতিত করা ছবিও টেলিগ্রামে এসেছে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াই শেষ নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, ইরান আরও বড় আকারে প্রতিশোধ নেবে, যা পুরো অঞ্চলকেই যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তেমনটা হলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৯ শতাংশের কাছাকাছি বেড়ে গেছে, যা কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। হামলা-পাল্টাহামলা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বে তেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট উত্তরণে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ইসরায়েলকে যুদ্ধাংশী মনোভাব থেকে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে না, যে কারণে মধ্যপ্রাচ্য সংকট বেড়েই চলছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।