পত্রিকার পাতা
ঢাকাশুক্রবার , ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কর্পোরেট
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  8. খেলাধুলা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. ধর্ম
  14. পর্যটন
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সব খবর

একতরফা ভোটের দায় স্বীকার: সাবেক সিইসি নূরুল হুদার স্বীকারোক্তি আদালতে

Md Abu Bakar Siddique
জুলাই ২, ২০২৫ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

একতরফা ভোটের দায় স্বীকার: সাবেক সিইসি নূরুল হুদার স্বীকারোক্তি আদালতে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন একতরফা ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায় স্বীকার করে। সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার সময় অনিয়ম, পক্ষপাত ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে দায় স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের খাস কামরায় তিনি এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আইনি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি: আদালতের আদেশ ও তদন্ত অগ্রগতি

আদালতের প্রসিকিউশন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান সাবেক সিইসিকে আদালতে হাজির করে জানান, তিনি স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। আদালত অনুমতি দিলে তা রেকর্ড করা হয়।

তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তার জবানবন্দির পুরো বিবরণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে গত ২৭ জুন দ্বিতীয় দফায় চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় কে এম নূরুল হুদাকে। তার আগে ২৩ জুন প্রথম দফার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিমান্ডে নেওয়ার পর তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা মামলার তদন্তে নতুন মোড় আনতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার নিজ বাড়ি থেকে নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত নূরুল হুদাকে একটি জুতার মালা পরিয়ে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

মামলার প্রেক্ষাপট ও বিস্তৃতি: একাধিক সিইসি ও শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান ২৫ জুন রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিনজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একসঙ্গে আসামি করা হয়।

তারা হলেন:

  • ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ

  • ২০১৮ সালের সিইসি কে এম নূরুল হুদা

  • ২০২৪ সালের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল

এছাড়া মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভয়ভীতি, গুম-খুন, মামলা ও গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে ভোট অনুষ্ঠান করে মিথ্যাভাবে সরকার গঠন করা হয়, যা আইনত রাষ্ট্রদ্রোহ ও জঘন্য অপরাধ।

গুরুতর অভিযোগ: রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত

এই মামলায় শুরুতে শুধু নির্বাচনি অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও, পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে আদালত রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সংযোজন করেন। সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো দণ্ডবিধির ১২৪ (ক), ৪২০, এবং ৪০৬ ধারা।

১২৪ (ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ৪২০ ধারায় প্রতারণা ও ৪০৬ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গজনিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

এ অভিযোগগুলো শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নকেও আঘাত করেছে।

এ মামলায় ইতিমধ্যেই আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ২৬ জুন তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ২৯ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ: গণতন্ত্রের প্রশ্নে নতুন বিতর্ক

এই মামলাটি শুধু আইনি লড়াই নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন এক মোড় তৈরি করেছে। এ পর্যন্ত দেশে বহু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, একজন সিইসি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন—এটি নজিরবিহীন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে বড় ধরনের দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি আদালতে স্বীকার করেন যে তিনি একটি একতরফা, ডামি নির্বাচন পরিচালনা করেছেন—তাহলে শুধু তার দায় নয়, পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বহু বছর ধরে বলে আসছিল যে এসব নির্বাচন ছিল একতরফা এবং অবৈধ। এবার সেই দাবির পক্ষে একজন নির্বাচনী প্রধানের স্বীকারোক্তি বিচারিক রূপ পেল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা।


নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন

কে এম নূরুল হুদার স্বীকারোক্তি শুধু একটি ব্যক্তিগত অপরাধ স্বীকার নয়; এটি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার উপর গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আইনি ও রাজনৈতিক মহলে জোর দাবি উঠেছে—নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া, সাংবিধানিক দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা নিয়ে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর সংস্কার জরুরি।

অন্যথায়, ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে, যার পরিণতি হতে পারে গণতন্ত্রের স্থবিরতা ও সামাজিক অস্থিরতা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।