জুলাই হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম ফাইনাল রিপোর্টের নারাজির শুনানি হতে পারে আজ রবিবার। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে এই শুনানি ধার্য রয়েছে। শুনানিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজর এহসানুল হক সমাজী রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।গত বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলায় মাত্র ৬০ দিনের তদন্তেই সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দিয়েছে পুলিশ। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১০ নেতা-কর্মীসহ সব আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।জুলাই হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলায় এটিই প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন। তবে পুলিশের দেওয়া ওই প্রতিবেদন বাতিল ও মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল হক দিদার।
শনিবার( ৯ আগস্ট) আজিজুল হক দিদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাদী বা সাক্ষীদের কোনো ধরনের জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণ সবই বিদ্যমান আছে। মাত্র ৬০ দিনের তদন্তে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ জানিয়ে অতি গোপনে আদালতে ফাইনাল রিপোর্টটি দাখিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবীকে বিষয়টি কোনোভাবেই জানানো হয়নি। আমি প্রায় সাত মাস পর আকস্মিকভাবে জিআর শাখায় গিয়ে বিষয়টি জেনেছি। এটি সহজেই অনুমেয় যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা মনগড়া ও আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন। ফলে ফাইনাল রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নারাজির আবেদন করেছি। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আগামীকাল (আজ রবিবার) শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।’
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আন্দোলরত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলশান এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী তানভীর আলীর নির্দেশে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান।এ ঘটনায় নিহত আবিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাসান মাহমুদ বাদী হয়ে ১৮ আগস্ট আদালতে মামলা করেন। আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে রুজু করতে গুলশান থানাকে নির্দেশ দেন। ২০ আগস্ট এজাহার রুজু করে গুলশান থানা। এতে তানভীর ও বাবুলসহ মোট ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ থেকে ২০০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত অপর আট আসামি হলেন উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল, গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা আনিসুর রহমান সুজন, মানিক, সোহাগ, গুলশান থানা শ্রমিক লীগের মহসিন ওরফে কাঁকড়া মহসীন, গুলশান থানা যুবলীগের জামিল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম এবং গুলশান থানা আওয়ামী ওলামা লীগ সহসভাপতি আব্দুল হামিদ।
মামলাটির তদন্ত করেন গুলশান থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রোমেন মিয়া (বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় কর্মরত)। তিনি মামলার মাত্র ৬০ দিনের মাথায় তদন্ত শেষে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ জানিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। এতে প্রধান আসামি তানভীর আলীকে কানাডার নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আলামত হিসেবে তার কানাডীয় পাসপোর্টের ফটোকপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেও এর কোনো তথ্য তুলে ধরা হয়নি। ফাইনাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “মামলার বাদী হাসান মাহমুদ এবং সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলাটি ‘তথ্যগত ভুল’। মামলায় বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে আসামিদের জড়িত থাকার কোনো তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সব আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে ‘চূড়ান্ত রিপোর্ট’ দাখিল করা হলো।”
ফাইনাল রিপোর্টটি বাতিল এবং পুনঃতদন্ত চেয়ে গত ১৩ জুলাই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দাখিল করেন ভারপ্রাপ্ত পিপি আজিজুল হক দিদার। এদিকে ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি তানভীর আলীর বিরুদ্ধে অন্য আরেকটি ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জুলাই আন্দোলনে রামপুরায় গুলিবিদ্ধ নাহিদ হাসান ট্রাইব্যুনালে অভিযোগটি করেন। ইতোমধ্যে তদন্ত সংস্থার কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন নাহিদ হাসান।