পত্রিকার পাতা
ঢাকাশুক্রবার , ৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. উদ্যোক্তা
  5. কর্পোরেট
  6. কৃষি ও প্রকৃতি
  7. ক্যাম্পাস-ক্যারিয়ার
  8. খেলাধুলা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. ধর্ম
  14. পর্যটন
  15. প্রবাস
আজকের সর্বশেষ সব খবর

তামাকের কালোবাজারে মাসে ৮৩ কোটি অবৈধ সিগারেট!

Md Abu Bakar Siddique
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫ ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশে অবৈধ তামাক ব্যবসার ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে সম্প্রতি ইনসাইট মেট্রিক্সের এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। দেশে অবৈধ তামাক ব্যবসা এমন আশঙ্কাজনক হারে বিস্তৃত হয়েছে যা আর সাধারণ চোরাচালান বা নকল পণ্যের সীমিত সরবরাহে সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ণাঙ্গ অপরাধ চক্র এর পিছনে কাজ করছে, যার বিকাশ ঘটছে প্রকাশ্যেই। আর এর ফলশ্রুতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।গবেষণা অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় অবৈধ তামাক বাজার প্রায় ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মাসে বাজারে আসছে প্রায় ৮৩২ মিলিয়ন শলাকা অবৈধ সিগারেট, যা শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং অর্থনীতির জন্যও ভয়াবহ সংকট তৈরি করছে। এই অবৈধ বাজারের বড় অংশ দখল করে আছে ‘ইলিসিট হোয়াইটস’, যেগুলো আমাদের দেশে নানা অবৈধ উপায়ে উৎপাদিত হয় এবং ভুয়া, পুনঃব্যবহৃত কিংবা সম্পূর্ণ ট্যাক্স স্ট্যাম্পবিহীনভাবে বাজারজাত হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে চোরাচালানকৃত ব্র্যান্ড যা কন্ট্রাব্যান্ড নামে পরিচিত, সেগুলোও বাজার সয়লাব করে ফেলেছে। এসব চোরাচালানকৃত সিগারেট কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই দেশের বাজারে প্রবেশ করছে। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অবৈধ এ বাণিজ্যের কারণে সরকার যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঘোষিত বার্ষিক ২,০০০ কোটি টাকার হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ এর দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি হতে পারে, কারণ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে এই অবৈধ ব্যবসা ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশে চোরাই পথে আনা বিদেশি সিগারেট বা কন্ট্রাব্যান্ড পণ্যগুলো প্রবেশ করছে অপ্রকাশ্য ও গোপন চ্যানেলের মাধ্যমে। এভাবে তারা সিগারেট আমদানির উপরে প্রায় ৬০০ শতাংশ যে উচ্চহারের আমদানি শুল্ক সরকার আরোপ করেছে তা এড়িয়ে যাচ্ছে। এরূপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর ফাঁকি কেবল অপরাধই নয়, বরং এভাবে অবৈধ ব্যবসায়ীরা বিপুল মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সরকারের রাজস্ব থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা এভাবেই কালো বাজারে হারিয়ে যাচ্ছে।এই ক্ষতি কেবল সরকারের কোষাগারেই সীমাবদ্ধ নেই। সস্তা ও অবৈধ এই সিগারেটগুলো দ্রুতই নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী এবং তরুণদের পছন্দের পণ্য হয়ে উঠছে। এর ফলে ধূমপানের হার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বৈধ সিগারেটের দাম যখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তখন অবৈধ সিগারেট সহজলভ্য ও সস্তা থাকায় এটি এক ধরনের ‘ফাঁদ’ হিসেবে কাজ করছে।আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো বাংলাদেশের বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে প্রকাশ্যেই উপেক্ষা করা হচ্ছে। বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ অবৈধ সিগারেটে ভুয়া ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহৃত হচ্ছে বা কোনো ট্যাক্স স্ট্যাম্পই নেই, এগুলো মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার বাইরে থেকে যায় এবং প্রায়শই অগোচরে পরিচালিত এবং অনিয়ন্ত্রিত কারখানায় তৈরি হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, এইসব অবৈধ সিগারেটে অনিরীক্ষিত এবং এতে ভয়ানক ক্ষতিকারক উপাদান থাকতে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।

দেশজুড়ে খুচরা দোকানগুলোতে ট্যাক্স স্ট্যাম্পের প্রকাশ্য পুনঃব্যবহার যেন এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈধ সিগারেট প্যাকেট থেকে স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে তা আবার অবৈধ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, এটি প্রকাশ্য কৌশল, যা অবৈধ ব্যবসাকে আরও জোরদার করে চলেছে। খুচরা বিক্রেতারা সজ্ঞানে অথবা নিজের অজান্তেই এই আন্ডারগ্রাউন্ড সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হচ্ছেন।বাংলাদেশে অবৈধ সিগারেট ব্যবসা এখন সুসংগঠিত ও কার্যকর এক নেটওয়ার্ক। খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই জানিয়েছেন, তারা অবৈধ সিগারেটের নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ইতোমধ্যেই এ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও বগুড়াও এখন অবৈধ সিগারেট ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। চোরাই পথে আসা বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো খুচরা দোকানে দাপটের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে অগণিত অনিয়ন্ত্রিত সিগারেটের বাজার সয়লাব হচ্ছে, আর বৈধ কর পরিশোধ করা ব্র্যান্ডগুলো দ্রুতই স্থান হারাচ্ছে। ফলস্বরূপ, সরকার বিপুল রাজস্ব ক্ষতির শিকার হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

মাত্র ১৬ মাসে কাস্টমস ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ৬১ কোটিরও বেশি অবৈধ সিগারেট জব্দ করেছে। শুধু জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে অবৈধ সিগারেট, চোরাচালান ও জাল ট্যাক্স স্ট্যাম্পের কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৫৮ কোটিরও বেশি টাকা। এ পরিসংখ্যান আসল পরিস্থিতির খুবই অল্প অংশ তুলে ধরে। কারণ এই তথ্য এসেছে সীমিত সংখ্যক অভিযান ও নথিভুক্ত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি, যা সরকারের রাজস্ব ও জনস্বাস্থ্য উভয়ের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ সমস্যার সমাধান কেবল সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সম্ভব। অবিলম্বে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে এই অবৈধ সাম্রাজ্যের মূল উপড়ে ফেলা যায়। কেবল তখনই বাংলাদেশ তার রাজস্ব রক্ষা করতে পারবে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবে এবং অবৈধ ব্যবসার কালো ছায়া থেকে নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে দেশ ও অর্থনীতির উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।