ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিন হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম দুর্নীতির মামলায় শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৩ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার আসামিদের তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যের সম্পত্তির ‘তথ্য গোপন’ এবং জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ‘অসংগতিপূর্ণ’ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তদন্তাধীন। তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি করে বিপুল পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনাবেচার তথ্য রয়েছে। বিষয়টি উদঘাটনসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যদের সম্পর্কে তথ্য জানা দরকার। এ ছাড়া সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।গত ৩১ আগস্ট আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ধার্য করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে তারিখ পেছানো হয়। শুনানির জন্য কারাগার থেকে দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে দুদকের প্রসিকিউটর
মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানিতে বলেন, ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে তারা ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। টাকা আত্মাসাৎ করে পাচার করেছেন। আত্মসাৎকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান লিটন ঢালী তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, দুদক প্রসিকিউটর মামলার এজাহার বহির্ভূত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। মতিউর অসুস্থ। তার রক্তচাপ ১৫০/১০০। যেকোনো সময় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিন দেয়া হোক।দুই পক্ষ শুনে বিচারক আসামিদের একদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত বছরের ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী জমা দেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। এক সপ্তাহ পরে ১৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন মতিউর।গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক।
মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব ক্রোক করা হয়।চলতি বছরের ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।প্রসঙ্গত, কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে যেয়ে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তুমুল আলোচনা শুরু হয়। পরিচয়ে বেরিয়ে আসে তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান।নানান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে বিপুল বিত্তবৈভবের তথ্য।