বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ৫টি দূর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি ইসলামী ব্যাংক করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও এই বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সরবরাহে একমত হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে উক্ত ব্যাংকসমূহে প্রশাসক নিয়োগের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উক্ত উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, দূর্যোগ মোকাবেলা করতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্হা হিসেবে উক্ত পদক্ষেপসমূহ নেওয়া হলে আমানতকারীদের আস্হা নষ্ট হতো না এবং গত ১ বছরে সরকারের প্রায় ৫৪০০০ কোটি টাকার লিকুইডিটি সহায়তার প্রয়োজন হতো নাহ। উক্ত অর্থের সদ্ব্যবহার করে জনগনের জন্য আরো ভালো বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা যেন। যাহোক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর কর্তৃক বার বার ব্যাংক দেওলিয়া হওয়ার বক্তব্য জনমনে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে এবং তা থেকে সংকট ঘনীভূত হয়েছে তা স্পষ্ট। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারনে প্রশাসকগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জনমনে আস্হা ফিরাতে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখা যাক, লিকুইডেশন (liquidation) বা ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া দুর্বল ব্যাংক সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এবং বাংলাদেশে নানা বিকল্প কী কী পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলোঃ
১️⃣ পুনঃমূলধনীকরণ (Recapitalization)
শুধু সরকার নয়, বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার বা নতুন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে নতুন মূলধন এনে ব্যাংকের পুঁজির ঘাটতি পূরণ করা।
প্রয়োজনে শর্তযুক্ত মূলধন (contingent capital) বা বন্ড ইস্যু করা।
২️⃣ মার্জার বা অধিগ্রহণ (Merger & Acquisition)
শুধু দূর্বল ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করণের মাধ্যমে নয়, শক্তিশালী ও সুপরিচালিত ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা।
ব্যাংকের আকার, শাখা ও গ্রাহকভিত্তি বজায় রেখে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নত হয়।
৩️⃣ পুনর্গঠন (Restructuring)
ম্যানেজমেন্ট টিম ও পরিচালনা বোর্ড পুনর্গঠন।
কর্মী দক্ষতা বৃদ্ধি, অনলাইন ব্যাংকিং বা কোর ব্যাংকিং সিস্টেম উন্নয়ন।
অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো।
৪️⃣ খারাপ সম্পদ আলাদা করা (Asset Management / Bad Bank)
অনাদায়ী বা ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগুলো আলাদা করে “Bad Bank” বা বিশেষ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে হস্তান্তর।
মূল ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার থাকে এবং নতুন ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়া যায়।
৫️⃣ ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনঃআলোচনা (Loan Rescheduling & Restructuring)
খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের সাথে নতুন করে পরিশোধ সময়সূচি নির্ধারণ।
সুদের হার, কিস্তি ও সময়সীমা পুনর্গঠন করে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ানো।
৬️⃣ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা সংস্কার
ডিজিটাল ব্যাংকিং, কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার, অনলাইন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা।
অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অডিট ও কমপ্লায়েন্স শক্ত করা।
৭️⃣ সরকারি বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়ক স্কিম
রিফাইন্যান্স স্কিম, ইন্টারেস্ট সাবসিডি, বিশেষ পুনঃতহবিল ইত্যাদি চালু করে ব্যাংককে অস্থায়ী সহায়তা।
শর্তসাপেক্ষ সহায়তা — যেমন, নির্দিষ্ট সময়ে মূলধন পর্যাপ্ততা অর্জন করতে হবে।
৮️⃣ গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি উদ্যোগ
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো।
সেবা মান উন্নয়ন, আমানতকারীর সুরক্ষা গ্যারান্টি ইত্যাদি ঘোষণা।
দুর্বল ব্যাংক সংস্কারে একক কোনো সমাধান নেই। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা ও বাজার পরিস্থিতি বিচার করে “পুনঃমূলধনীকরণ + পুনর্গঠন + খারাপ সম্পদ ব্যবস্থাপনা + ম্যানেজমেন্ট সংস্কার” — এই ধরণের সমন্বিত পরিকল্পনা সবচেয়ে কার্যকর হয়।