‘যা চাও, সবই তো পাও। তাহলে পড়ালেখার এই হাল কেন?’ পড়ালেখায় একটু পিছিয়ে থাকা শিশুদের এমন বাক্য শুনতে হয় প্রায়ই। হয়তো যে অভিভাবক এই লেখা পড়ছেন, তাকেও শৈশবে শুনতে হয়েছে এমন কথা। কিংবা আপনি নিজেই হয়তো আপনার সন্তানকে হতাশায় কখনো এমন কথা বলে ফেলেছেন। শিশুমন কোমল।
এমন বাক্যে সেই মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের দেশে কোনো শিশুকে ‘ভালো ছেলে’ বা ‘ভালো মেয়ে’ হিসেবে সামাজিক স্বীকতিৃ পেতে হলে অবশ্যই তাকে পড়ালেখায় ভালো হতে হয়। এ এক অলিখিত শর্ত। সব শিশু সব বিষয়ে সমান পারদর্শী হবে না, এটা জগতের নিয়ম। কেউ পড়ালেখায় ভালো, কেউ ছবি আকায়, কেউ অন্য কাজে। প্রত্যেকের ভেতরই আছে অমিত সম্ভাবনা। নেতিবাচক আচরণে শিশুর ক্ষতি ঢাকার স্যার সলিমল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রশিদুল হক বলেন, ‘নেতিবাচক বাক্যে শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়।
শিশু হীনম্মন্যতায় ভোগে। তার আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। পরে পরীক্ষার সময় হলেই সে বাড়তি চাপ অনভব করে, এমনকি আতঙ্কেও ভগতে থাকে। পড়ালেখায় মনোযোগ কমে যায়। পড়তে বসে অস্থিরতায় ভোগে, পড়ার পর পড়া ভুলে যায়। এভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। মাথাব্যথা বা ঘমের সমস্যায়ও ভুগতে পারে শিশু। তার মধ্যকার সুকুমারবৃত্তি হারিয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভবিষ্যতে ভালো কিছ করার সম্ভাবনা। অভিভাবকের সঙ্গে দূরত্বও সৃষ্টি হতে পারে।’ শিশুর মনকে বুঝুন ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সলতানা বলেন, প্রতিটি শিশুই অনন্য।
সবার মেধা সমান না হলেও সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে শিশুর সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানো যায়। পড়াটাকে শিশুর কাছে আনন্দময়ভাবে উপথাপন করতে হবে। সব শিশু একইভাবে পড়তে চাইবে, এমন নয়। কেউ হয়তো টানা কিছুটা সময় পড়ে নেয়। কেউ আবার একটু পড়েই বিরতির জন্য উসখুস করে কিংবা কোনো কোনো সময় হয়তো পড়তেই চায় না। অভিভাবকের উপস্থিতি পছন্দ করে কোনো কোনো শিশু। যে শিশুর যেমন চাহিদা, তাকে সেভাবেই সময় দিতে হবে।