আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) প্রস্তাব দিয়েছে যে, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হোক।বর্তমানে, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক। অ্যামচ্যামের মতে, এটি নীতিগতভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ ক্রেডিট কার্ডও একটি ঋণপণ্য।মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার শর্ত শিথিল করলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, এটি গোপন আয় চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে, ফলে করযোগ্য আয় বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক করনীতি আরও কার্যকর হবে।গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যামচ্যাম তাদের করসংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এই আলোচনায় ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন এবং অর্থনীতিবিদরা অংশ নেন।অ্যামচ্যাম আরও উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং সার্ভিসের ওপর করহার অনশোর ব্যাংকিংয়ের সমান, যা ৪০ শতাংশ।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এই করহার অনেক বেশি, যেখানে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (OBU) জন্য করহার ০-২০ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়।সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, OBU মূলত রপ্তানিকারকদের সহায়তা করে এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করে। তাই নিম্ন করহার নিশ্চিত করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে এবং স্থানীয় রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবেন।অ্যামচ্যাম আরও জানায় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো নগদ লেনদেনের আধিপত্য রয়েছে, কারণ ডিজিটাল পেমেন্টে অতিরিক্ত ভ্যাট বা কর বসানো হয়।অন্যান্য অনেক দেশে ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করতে কর ছাড় বা প্রণোদনা দেওয়া হয়, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এমন ব্যবস্থা নেই।
অ্যামচ্যাম প্রস্তাব করেছে যে, কার্ড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) বা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন করলে ৫% প্রণোদনা দেওয়া হোক—এর মধ্যে ৩% গ্রাহক এবং ২% ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করলে লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়বে, কর ফাঁকি কমবে এবং সামগ্রিক আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রস্তাব
- উইমেন আন্ত্রেপ্রেনার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (WEND) প্রস্তাব দিয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হোক।
- ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (IBCCI) আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য যাচাই তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার এবং পণ্যের উৎস দেশ অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে।
- বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (BUILD) করনীতি ও কর আদায় ব্যবস্থাকে পৃথক করার জন্য গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
অ্যামচ্যাম এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এসব প্রস্তাব কর প্রশাসনকে সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেওয়া হয়েছে। এনবিআর এসব প্রস্তাব ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনা করবে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।